লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক আলোচনা করো।
দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক আলোচনা করো, এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক আলোচনা করো
রাষ্ট্রপতি, লোকসভা ও রাজ্যসভাকে নিয়ে ভারতের পার্লামেন্ট গঠিত হয়। রাজ্যসভা ও লোকসভা বিভিন্ন ক্ষমতা ভোগ করে থাকলেও উভয়ের মধ্যে ক্ষমতা গত দিক দিয়ে বিভিন্ন মিল বা অমিল লক্ষ্য করা যায়। সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল-
লোকসভা ও রাজ্যসভার গঠনগত পার্থক্য
গঠনগত ক্ষেত্রে যে সমস্ত পার্থক্য গুলি লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল যথা—
(১) লোকসভার সদস্য সংখ্যা রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যা অপেক্ষা অনেক বেশি। রাজ্যসভা অনাধিক 250 জন সদস্য নিয়ে গঠিত হতে পারে। কিন্তু লোকসভার সদস্য সংখ্যা হল সর্বাধিক 552 জন। প্রতিটি অঙ্গ রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচিত প্রতিনিধি গন একক হস্তান্তরযোগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যসভার সদস্যদের নির্বাচন করেন।
কিন্তু,লোকসভার সদস্যগন সার্বিক প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনসাধারণ কর্তৃক গোপন ভোটদান পদ্ধতিতে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। তাছাড়া রাষ্ট্রপতি সেখানে সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজসেবা, চারুকলা প্রভৃতি বিষয়ে পারদর্শী ব্যক্তিদের মধ্যে 12 জনকে রাজ্যসভায় মনোনীত করতে পারেন। আর লোকসভায় 2 জন ইঙ্গ ভারতীয় সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন।
(২) রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রার্থীর নূন্যতম বয়স 30 বছর হতে হয়। কিন্তু লোকসভার ক্ষেত্রে 25 বছর বয়স হলেই চলবে।
লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক |
(৩) রাজ্যসভা পার্লামেন্টের স্থায়ী কক্ষ, রাষ্ট্রপতি এই কক্ষ ভেঙে দিতে পারেন না। রাজ্যসভার সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ 6 বছর প্রতি 2 বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্যকে অবসর গ্রহণ করতে হয়।
কিন্তু লোকসভার সাধারণ কার্যকালের মেয়াদ 5 বছর। এই কার্যকালের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি লোকসভায় ভেঙে দিতে পারেন, আবার জরুরি অবস্থার সময় তিনি লোকসভার কার্যকালের মেয়াদ 1 বছর বৃদ্ধিও করতে পারেন।
লোকসভা ও রাজ্যসভার ক্ষমতা গত ক্ষেত্রে পার্থক্য
ক্ষমতা ও মর্যাদার দিক থেকে বিচার করলে লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যকার সম্পর্ককে নিম্নলিখিত ৩ টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা—
(১) উভয় কক্ষ সম ক্ষমতা সম্পন্ন :- যেসব বিষয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভা সম ক্ষমতা ভোগ করে সেগুলি হল, যথা —
(a) অর্থবিল ছাড়া অন্যসব বিল পার্লামেন্টের যে কোন কক্ষে উত্থাপিত হতে পারে। উভয় কক্ষের সম্মতি ছাড়া ওই সব বিল আইনে রূপান্তরিত হতে পারে না।
(b) সংবিধান সংশোধন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও পদচ্যুতি, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয়কক্ষ সমক্ষমতার অধিকারী।
(c) রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঘোষনাটিকে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে সম্মতি লাভের জন্য পেশ করতে হয়।
(d) সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগন, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার প্রভৃতিদের পদচ্যুত করার জন্য উভয় কক্ষের সম্মতি প্রয়োজন।
(২) রাজ্যসভার প্রাধান্য :- যেসব বিষয়ে একক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেগুলি হল,যথা —
(a) রাজ্যসভা এককভাবে উপরাষ্ট্রপতিকে অবসর করার প্রস্তাব আনতে পারে।
(b) রাজ্যসভা যদি উপস্থিত ও ভোট দানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে রাজ্য তালিকাভুক্ত কোন বিষয়ে পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন করা উচিত তবে সেই বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করতে সক্ষম।
(c) সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নতুন কোন চাকরির পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন কিনা সে বিষয়ে সর্বপ্রথম রাজ্যসভার সদস্যরায় সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে প্রস্তাব গ্রহণ করে থাকে।
(৩) লোকসভার প্রাধান্য :- যেসব বিষয়ে রাজ্যসভা অপেক্ষা লোকসভার প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেগুলি হল যথা—
(a) অর্থবিল কেবলমাত্র লোকসভায় উত্থাপিত হতে পারে।
(b) কোন বিল অর্থবিল কিনা সে বিষয়ে লোকসভার অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
(c) রাজ্যসভা কোন অর্থবিলকে সংশোধন কিংবা বাতিল করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে লোকসভার প্রাধান্যই চূড়ান্ত।
(d) লোকসভা কর্তৃক গৃহীত যেকোনো অর্থ বিল রাজ্যসভায় প্রেরিত হওয়ার 14 দিনের মধ্যে সেটিকে লোকসভায় ফেরত পাঠাতে হয়। এই সময়ের মধ্যে লোকসভায় ফেরত না পাঠালে সংশ্লিষ্ট বিলটি উভয়কক্ষে গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
(e) মন্ত্রিসভা লোকসভার কাছে যৌথভাবে দায়িত্বশীল থাকে। লোকসভার আস্থাভাজন থাকলে মন্ত্রিসভাকে রাজ্যসভা পদচ্যুত করতে পারে না।
মন্তব্য :- সুতরাং, আমরা উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলতে পারি যে ভারতীয় পার্লামেন্টের দুটি কক্ষ সম ক্ষমতার অধিকারী নয়। বস্তুত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ‘লর্ড’ সভার মত ভারতীয় রাজ্যসভা যেমন এককভাবে ক্ষমতাহীন নয়, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিনেটের’ মত তা অত্যাধিক শক্তিশালীও নয়।
Political Science Question & Answere
- আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলতে কী বোঝো ? এই অধিকারের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও
- সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের মধ্যে আলোচনা করো
- জাতীয় ক্ষমতার উপাদানগুলি আলোচনা করো | আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি বা ক্ষমতার উপাদানগুলি কি
- জোট-নিরপেক্ষ বলতে কী বোঝো ? এর বৈশিষ্ট্য গুলির প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।
- গান্ধীর চিন্তা ধারার মূল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো | রাষ্ট্রচিন্তায় গান্ধীবাদ আলোচনা করো।
- উদারনীতিবাদ বলতে কী বোঝো ? উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
- মার্কসবাদের মূল সূত্র গুলি আলোচনা করো।
- ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও
- রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।
- রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।
- ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো।
- ভারতের পার্লামেন্টের | সংসদের | আইনসভার গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।
- লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক আলোচনা করো।
- ভারতীয় লোকসভার স্পিকারের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো।
- বিশ্বায়নের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং সুফল ও কুফল আলোচনা করো।
- ভারতের সুপ্রিম কোর্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।
- ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।
- ভারতবর্ষে অঙ্গ রাজ্যের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো
Comments
Post a Comment