ভাষা ও উপভাষার মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য | ভাষা ও উপভাষা

 ভাষা এবং উপভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা এর আগেই করা হয়েছে সুতরাং এ দুটি বিষয়ের বিশদ ধারণা পড়তে হলে এখানে ক্লিক করুনভাষা ও উপভাষা দুটি সম্পর্কে একটু সাধারণ ধারণা নেই আমরা ভাষা ও উপভাষার মধ্যে যে সম্পর্ক আর যে পার্থক্য বিদ্যমান তা দেখে নেব। 




ভাষা ও উপভাষা কি

   ভাষা হল মানুষের বাকযন্ত্র নিঃসৃত ধ্বনি সমষ্টি যার দ্বারা মানুষ একে অপরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারে। আর অন্যদিকে উপভাষা হলো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে মানুষের ভাব বিনিময় এর একটি মূল ভাষার যে নিজস্ব ছাদ, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ যখন ভাব বিনিময়ের জন্য কোন মূল ভাষার সামান্য পরিবর্তন করে NIJEDER মত ব্যবহার করে তখন তাকে আমরা উপভাষা বলি .

ভাষা ও উপভাষার মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য
ভাষা ও উপভাষার মধ্যে সম্পর্ক


   ভাষা এবং উপভাষার এই সাধারণ ধারণার পরে এখন বিস্তারিতভাবে এই দুটি বিষয়ের মধ্যে আলোকপাত করা যেতে পারে। আর এই দুটি বিষয়ের স্বতন্ত্রতা খুঁজে বের করলেই আমরা ভাষা ও উপভাষা সম্পর্কে ধারণাকে আরো মজবুত করে তুলতে পারব। 




ভাষা ও উপভাষার মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য

    ভাষা ও উপভাষার সম্পর্ক নির্ণয় এর জন্য উভয়ের মধ্যে যে পার্থক্য তাকে স্পষ্টভাবে বোঝা প্রয়োজন। ভাষা ও উপভাষার মধ্যে পার্থক্য চূড়ান্ত নয় তা আপেক্ষিক, আবার শ্রেণীগত নয় মাত্রাগত। একই ভাষার মধ্যে আঞ্চলিক পৃথক রূপকে বলে উপভাষা। 

   আবার এই পার্থক্য বেশি মাত্রায় পরিবর্তিত হয়ে রূপ নিলে একটি ভাষা থেকে একাধিক ভাষার জন্ম হয়। যেমন বাংলা O অসমীয়া ভাষা প্রথমে একটি নির্দিষ্ট ভাষার দুটি উপভাষা ছিল কিন্তু পরবর্তী সময়ে বাংলা o অাসামের ভাষার আঞ্চলিক পার্থক্য বেড়ে যাওয়ার ফলে এই দুটিকে পৃথক ভাষা রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। 



    এখন প্রশ্ন হলো একই ভাষার মধ্যে আঞ্চলিক রূপের পার্থক্য কে কোন স্তর পর্যন্ত উপভাষা বলা হবে, আবার এই পার্থক্য কোন স্তর পর্যন্ত বেড়ে গেলে তাকে আর উপভাষা বলা যাবে না। আসল ব্যাপারটি হলো এই বিষয়ের নির্দিষ্ট কোন মাপকাঠি নেই। কোন কোন ভাষা বিয়েতে বলেছেন ভাষার আঞ্চলিক রূপ যখন স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠীর ভাব প্রকাশের মাধ্যম হয়ে উঠবে তখন সেগুলিকে আর উপভাষা না বলে ভাষার মর্যাদা দিতে হবে। এবিষয়ে বেশ উল্লেখযোগ্য উদাহরণ বাংলা ও আসাম এর ভাষা দুটি।



    উপরের এই যুক্তিতে আবার সমস্যা হলো - এই মানদণ্ড হিসেবে ভাষা এবং উপভাষার কে বিচার করতে গেলে অধুনা বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের এই উপভাষা দুটিকে স্বতন্ত্র ভাষার মর্যাদা দিতে হয়। অথচ এই জুটিকে আমরা স্বতন্ত্র না বলে একি ভাষার দুটি উপভাষা বলে মান্যতা দিয়েছি।



   তাহলে উপভাষা থেকে ভাষার গঠনটা এরকম হতে পারে - যখন দুটি জনগোষ্ঠী সংস্কৃতির দিক থেকে পৃথক হবে তাদের ভাষার গঠন গত ও রূপগত কিছু বৈচিত্র আসবে তখন তারা স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে মর্যাদা পেতে পারে। এ কথা অনেকটা গ্রহণযোগ্য কারণ আসাম ও বাংলা ভাষার জনগোষ্ঠী সংস্কৃতিগত দিক থেকে আলাদা আবার এই দুটি ভাষার মধ্যে কিছু বৈচিত্র আছে। 

   আবার দুটি ভাষার মধ্যে সামান্য বৈচিত্র থাকলেও আসামি এবং বাঙ্গালীদের মধ্যে যে সংস্কৃতিগত পার্থক্য তা আপেক্ষিক কারণ সংস্কৃতিগত দিক থেকে এদের কিছুটা মিল আছে আবার কিছুটা পার্থক্য আছে সুতরাং বলতে পারি ভাষা ও উপভাষার মধ্যে চূড়ান্ত কিছুই নয়, আপেক্ষিক।



    ভাষা ও উপভাষার এই বিশ্লেষণ গুলির উপর অনেক ভাষাবিজ্ঞানের মতামত থাকলেও এই আপেক্ষিকতার কথা মাথায় রেখে অনেকে বলেন - একই ভাষাভাষী এলাকার অন্তর্গত একাধিক অঞ্চলের ভাষার আঞ্চলিক রূপের মধ্যে যত দিন পর্যন্ত পারস্পারিক বোধগম্যতা থাকে তখন ওই ছোটো ছোটো রূপ গুলিকে বলা হবে উপভাষা

   আবার এই আঞ্চলিক গুলি পৃথক হতে হতে যখন পারস্পারিক বোধগম্যতার সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন তাদের স্বতন্ত্র ভাষা হিসাবে মর্যাদা দেওয়া যেতে পারে। তবুও এই দুটি ধারণা যে সর্বজন গ্রাহ্য তা নয়। 



    কারণ বাংলা ভাষার উপভাষা রাড়হি ও বঙ্গালীর মধ্যে বোধগম্যতা নেই বললেই চলে। তবুও এ দুটি বাংলা ভাষার উপভাষা। অথচ আদর্শ বাংলা ও আদর্শ অসমীয়া দুটি স্বতন্ত্র ভাষা হওয়া সত্বেও এদের মধ্যে পারস্পারিক বোধগম্যতা অনেক বেশি, যদিও এই পারস্পারিক বোধগম্যতা অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত। সাধারণত দেখা যায় ভাষা মূলত একটি বৃহৎ অঞ্চলে বিস্তারিত, আর উপভাষা সেই বৃহৎ অঞ্চলের অঞ্চলের মানুষের ব্যাবহৃত মুখের ভাষা।



    আবার ভাষার একটি সার্বজনীন ও আদর্শ রূপ থাকে। বিভিন্ন অঞ্চলের লোক এরা নিজের নিজের অঞ্চলে ভাষাকে ঘরোয়াভাবে আঞ্চলিক উপভাষার মতো ব্যবহার করে কিন্তু সেই ব্যক্তিবর্গ তাদের সাহিত্যে, শিক্ষায়, আইন-আদালতে বক্তৃতা, সংবাদপত্রে আদর্শ - মূল ভাষা ব্যবহার করেন। 

    এইভাবে একটি আদর্শ ভাষার এলাকার মধ্যে একাধিক আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহৃত হয়। আধুনিককালে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যে যে বেশি করে উপভাষার ব্যাবহার দেখা যায় তার কারণ, সেই অঞ্চলের মানুষের আদর্শ রূপ টিকে সাহিত্যে যথাযথ ভাবে দেখানোর জন্য। 

   



👉👉  এখানে ভাষা - উপভাষা সম্পর্কে ও ভাষা ও উপভাষার পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ভাষা ও উপভাষা কাকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চাইলে এখানে ক্লিক করে দেখে নেওয়া যেতে পারে এছাড়া বাংলা ব্যাকরণ ও ভাষা থেকে অন্য বিষয় জানতে নিচের দেওয়া লিংক গুলি লক্ষ্য করতে পারেন।


এছাড়া বাংলা সাহিত্যের অনন্য প্রশ্নগুলি 

Comments

Popular posts from this blog

চর্যাপদ প্রশ্ন উত্তর - বাংলা সাজেশন - বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদ - pdf

Learning, শিখন। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রথম পার্ট।

রবীন্দ্রনাথের কর্তার ভূত গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন