বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে অক্ষয়কুমার দত্তের অবদান আলোচনা করো।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পথচলা শুরু হয়েছিল বাংলা গদ্যের বিকাশে। বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে যে সকল সাহিত্যিক, মনীষী উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অক্ষয় কুমার দত্ত ( Akshay Kumar Dutta )।
![]() |
Educostudy.In/Akshay-Kumar-Dutta |
আমরা এখানে বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে অক্ষয়কুমার দত্তের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো, ও তার কয়েকটি বিখ্যাত প্রবন্ধ - পুস্তক নিয়েও আলোচনা করবো।
অক্ষয়কুমার দত্ত
বাংলা সাহিত্যের ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার এক অক্ষয় উপহার অক্ষয়কুমার দত্ত। গদ্যসাহিত্যের গড়ে ওঠা যুগের এক অবিস্মরণীয় মাইলস্টোন তিনি। আবেগ নয়, যুক্তি আর বুদ্ধির মোহহীন চর্চাই তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র। সংস্কারের দাসত্ব তিনি কোনদিনই করেননি। দৃপ্ত মননশীলতার ক্রংক্রিটে বাঁধানো রাস্তা ধরেই তাঁর জীবনে এগিয়ে চলা। জ্ঞান সাধনার তীর্থতেই তিনি কুড়িয়ে নিয়েছেন প্রয়োজনের উপল-খণ্ড।
আর তা বাংলা সাহিত্যের মেঠোপথে বিছিয়ে দিয়েছেন। তার উপর দিয়ে সেকারণেই ভাবিকালের বহুগুণ ভারী রাজার গাড়িও চলে গেছে অনায়াসে। বাংলা ভাষাতেও যে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান, দর্শন, ভূগোল রচনা সম্ভব – এই বিশ্বাস তিনি জাগিয়েছেন।
বিদ্যাসাগরের মাধুর্য্য বিকাশের সমসময়ে অক্ষয়কুমারই বাংলা ভাষাকে দিয়ে গেলেন যুক্তি নির্ভর সেই অমোঘ শক্তি, যার প্রবল দুটি ডানায় বর দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিচিত্র যাতায়াতে আর কোনো আয়াস রইল না।
অক্ষয়কুমারের অধিকাংশ রচনাই প্রথম তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মাত্র ১৪ বছর বয়েসে তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘অনঙ্গমঙ্গল’ প্রকাশিত হয়। এটি একটি কবিতাগ্রন্থ।
এরপর ‘চারুপাঠ’-এ লেখকের পদার্থবিদ্যা, স্বাস্থ্যবিধান, জ্যোতিষ, প্রাণিবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে এবং সদাচার ও ধর্মাচার সংক্রান্ত নিবন্ধের মিশ্রণে পাণ্ডিত্য ও ভাবুকতার মিশেল দেখা গেছে। ‘চারুপাঠ’-এর স্বপ্নদর্শন পর্যায়ের তিনটি বিশেষ ধরণের প্রবন্ধ – বিদ্যাবিষয়ক, কীর্তিবিষয়ক, ন্যায়বিষয়ক – ইংরেজি লেখক Addison-এর Vision of Mirza অবলম্বনে লেখা।
১৮৫১ ও ১৮৫৩-তে প্রকাশিত দুই খন্ডের গ্রন্থ ‘বাহ্যবস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার’ রচনায় লেখক জর্জকুম্ব রচিত ‘Constitution of Man’ গ্রন্থের উপর নির্ভর করেছিলেন। এর আগে ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘ভূগোল’ আর ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘ডেভিড হেয়ার সাহেবের স্মরণার্থ তৃতীয় সাম্বৎসরিক সভার বক্তৃতা’।
সাহিত্যের ইতিহাসে এদের অবদান শূন্য। এছাড়াও ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘বাষ্পীয় রথারোহীদিগের প্রতি উপদেশ’, ‘ধর্মোন্নতি সংসাধন বিষয়ক প্রস্তাব’, এবং ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘ধর্মনীতি’ ও ‘পদার্থবিদ্যা’ নামক কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এগুলি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ না হলেও মৌলিক চিন্তা, তথ্যপূর্ণতা, ভাষার গাম্ভীর্য আজও আধুনিক পাঠককে আকর্ষণ করে।
১৮৭০ এবং ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে দুইভাগে প্রকাশিত ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ গ্রন্থটির রচনার ভিত্তি H. H. Wilson-এর ‘Religious Sects of the Hindus’। এই গ্রন্থে ১৮২টি সম্প্রদায়ের বিবরণ আছে। এখানে যেমন আছে যুক্তির তীক্ষ্ণতা তেমন কোন কোন জায়গায় কবিত্বের লক্ষণও প্রকাশিত।
বৈজ্ঞানিক ও সমাজতান্ত্রিক গ্রন্থ রচনারকালে অক্ষয়কুমার পরিভাষার সমস্যায় ভোগার জন্য নিজেই অনেক পরিভাষা প্রণয়ন করেন। যেমন- -Self-esteem – আত্মাদর, Physiology-শারীরিবিধান, Machine-শিল্পযন্ত্র, Anatomy-শরীরস্থান ইত্যাদি। যদিও পরবর্তীকালে এর অনেকগুলি পরিতাজ্য।
ভাষার শিল্পশ্রী বৃদ্ধি করবেন, এমন উৎসাহ অক্ষয়কুমার কখনো দেখাননি। তিনি ‘Forcible Forable Preacher’ তাই তিনি বিদ্যাসাগরের কালে অতিরিক্ত যুক্তিপ্রবণ ও তাত্ত্বিক ভঙ্গিতে বাংলা সাহিত্যে একটা style-কে নির্মাণ করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। ‘Field Work Research’-বাংলা ভাষা সাহিত্যে প্রথম অক্ষয়কুমারের লেখাতেই প্রকাশ পায়। রমেশচন্দ্র দত্ত তাই ঠিকই লেখেছেন-
“In Akshaykumar’s style we admire the relevance and force of the mountain torrent in its wild and rugged beauty.”
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
👉👉 প্রাবন্ধিক অক্ষয় কুমার দত্তের সম্পর্কে আমরা এখানে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করলাম। যদি এই আলোচনা আপনার ভালো লাগে তবে নিচে কমেন্ট করে জানাবেন। এছাড়া বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য গুরুত্ব পূর্ন প্রশ্ন ও উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন, ধন্যবাদ।।
Comments
Post a Comment