আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলতে কী বোঝো ? এই অধিকারের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও

দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলতে কী বোঝো ? এই অধিকারের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি, এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।




আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার

    জাতীয় জনসমাজে নিজের রাজনৈতিক ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের দাবিকে সংক্ষেপে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলে। এই অধিকার প্রতিষ্টিত হলে পৃথিবীতে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার
আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার


আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার :- যখন কোন আত্মসচেতন জাতীয় জনসমাজ নিজের পৃথক সত্তা ও জাতির বৈশিষ্ট্য রক্ষার জন্য একটি নিজস্ব রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে নিজের রাজনৈতিক ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানাই তখন তাকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলেOne Nation,One State - এটি হলো আত্মনিয়ন্ত্রণের একমাত্র শ্লোগান বা উদ্দেশ্য। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হলে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রে একটি করে জাতীয় সরকার গড়ে উঠবে। ওই সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রতিটি জাতির অগ্রগতির ধারা অক্ষুণ্ন থাকবে। মাৎসিনি, জে.এস. মিল, উইলসন প্রমুখরা হলেন আত্মনিয়ন্ত্রণের মুখ্য সমর্থক।


আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি

স্বপক্ষে যুক্তি 



     আত্মনিয়ন্ত্রণের স্বপক্ষে যে সমস্ত যুক্তিগুলি দেওয়া যেতে পারে সেগুলি হল যথা —

(ক) গণতন্ত্র সম্মত :- আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবী প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রসম্মত। কেননা এই দাবি প্রতিষ্ঠিত হলে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের জনগণ নিজেদের নির্বাচিত জাতীয় সরকার গঠনের সুযোগ পাবে।

(খ) জাতীয় গুণাবলীর বিকাশ :- প্রতিটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি, প্রতিভা, ঐতিহ্য প্রভৃতি থাকে। জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ওই জাতির নিজস্ব গুণাবলীর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানো সম্ভব হবে।



(গ) সভ্যতার বিকাশ :- প্রতিটি জাতির জন্য একটি নিজস্ব রাষ্ট্র ও নিজস্ব সরকার থাকলে সেই জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতির চরম উন্নতি ঘটবে। এর ফলে পৃথিবীর সব জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতির অগ্রগতির সাথে সাথে বিশ্ব সভ্যতার বিকাশ ঘটবে।

(ঘ) দেশ প্রেম জাগরন :-  জাতি ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে উঠলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিবাদ-বিসংবাদ এর সম্ভাবনা থাকে না। জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের মানুষ নিজের প্রাণ অপেক্ষা রাষ্ট্রকে অধিক ভালবাসবে, ফলে দেশপ্রেমের জাগরন ঘটবে।



(ঙ) যুদ্ধের সম্ভাবনা হ্রাস :-  জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে উঠলে বিভিন্ন জাতির মধ্যে ঈর্ষা, দ্বন্দ্ব প্রভৃতি থাকবে না। ফলে পৃথিবীতে বিশ্ব যুদ্ধের সম্ভাবনা অনেক অংশে মুক্ত থাকবে।


আত্মনিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি 

 আত্মনিয়ন্ত্রণের স্বপক্ষে বিভিন্ন যুক্তির পাশাপাশি বিপক্ষেও একাধিক যুক্তি দেওয়া যেতে পারে। এই যুক্তি হলো নিম্নরুপ — 

(ক) অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি :- ভৌগোলিক কারণে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতিটি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এই নীতি প্রয়োগ করা হলে প্রাকৃতিক সম্পদের অসম বন্টন হবে এর ফলে অধিকাংশ জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়বে ও রাষ্ট্রের অগ্রগতি ব্যাহত হবে।



(খ) সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উদ্ভব :- অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গুলিকে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি ক্রমাগত গ্রাস করে নেবে ফলে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বাস্তবায়িত হলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উদ্ভব হবে।

(গ) বিশ্ব শান্তির বিরোধী :- জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের দাবি কার্যকরী হলে বিভিন্ন জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রে উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাবে যা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য করে তুলবে আর এই যুদ্ধ বিশ্বশান্তির বিরোধী।

(ঘ) উদ্বাস্তু সমস্যার সৃষ্টি :- বহুজাতিক রাষ্ট্র ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একাধিক রাষ্ট্রে পরিণত হলে সমগ্র পৃথিবীতে অধিকাংশ রাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে উদ্বাস্তু সমস্যার সৃষ্টি হবে।



(ঙ) বাস্তব প্রয়োগ অসম্ভব ও অকাম্য :- বহু জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে পাশাপাশি বসবাস করার ফলে বিভিন্ন জাতির মধ্যে যথেষ্ট ঐক্য ও সম্প্রীতি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি বাস্তবায়িত হলে সেই ঐক্য ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে সেইজন্য এই নীতির বাস্তব প্রয়োগ অসম্ভব ও অকাম্য।


  উপরিউক্ত বিপক্ষের বিভিন্ন যুক্তি গুলি থেকে সহজেই বলতে পারা যায় বর্তমান দিনে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এর প্রয়োজনীয়তা নেই বললেই চলে। তবে আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি যদি কোন পরাধীন জাতির মুক্তির সংগ্রাম হয় তবে তাকে সবসময় সমর্থন করা উচিত।


Political Science Question & Answere

Comments

Popular posts from this blog

সপ্ত প্রবাহের নীতি। মাধ্যমিক কমিশনের সপ্ত প্রবাহের নীতি।

MP 2020 History MCQ suggestions, part 6th,

Four pillars of Education - শিক্ষার চারটি স্তম্ভ | Delors Commission 1997