জোট নিরপেক্ষতা কি ? এর বৈশিষ্ট্যের প্রকৃতি আলোচনা করো ।
Jot-niropekko-nitir-boisisty-alochona.
ভূমিকা
বিশ্বযুদ্ধত্তর কালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ অপরিসীম গুরুত্ব ও বিপুল মেজদার অধিকারী। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী কালের রুদ্ধশ্বাস দিনের এবং ঠান্ডা লড়াইয়ের আক্রান্ত আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল অধ্যায়ে এই আন্দোলন একটি সংঘটিত রূপ লাভ করে । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর উপনবেশিক শাসনের কবল থেকে বহু দেশের যুক্তি পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্য বাদের সংকট জাতিয় স্বাধীনতার সার্বভৌম ও ভুখন্ডগত রক্ষা প্রভৃতি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রসারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলো ।
![]() |
জোট নিরপেক্ষতার অবস্থান |
সংজ্ঞা
জোট নিরপেক্ষতা বলতে কি বোঝায়। এ বিষয়ে অনেক সময় বিভ্রান্ত সৃষ্টি হয়, তাই এই প্রসঙ্গে বার্টন বলেছেন "এই ধারণার মাধ্যমে সেই সকল দেশের পররাষ্ট্র নীতিকে বোঝায় যারা, সোভিয়েত সমাজ বাদী জোট বা মার্কিন পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক জোট, কোনো জোটেই যোগদান করেনি ", কিন্তু কোনো বিশেষ অবস্থার জন্য কোনো রাষ্ট্র এই নীতি গ্রহণ করবে।
মার্শাল টিটি জোট নিরপেক্ষ নীতি কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন - এই নীতি হলো দুটি পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠীকে পৃথিবীর স্বাস রুদ্ধকারী মেরুকরণ প্রবণতা তথা বিভাজনের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা। আবার জহর লাল নেহেরু বলেন - আমরা সকল প্রকার চিন্তার প্রবাহ ও সকল প্রকার আদর্শের সঙ্গে সমর্থন জানায়। কিন্তু আমাদের নিজেদের পথচলার অধিকার টিকে আমরা সংরক্ষিত রাখছি ।
বৈশিষ্ট্য
1955 সালের বানদুং সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শুভ সূচনার যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য গুলি রচিত হয়েছে সেগুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো----
Jot-niropekko-nitir-boisisty-alochona.
১. শান্তিপূর্ন সহবস্থান
জোট নিরপেক্ষতা বলতে যেমন নিঃসঙ্গবাদ ও নিরোপেক্ষতাবাদ কে বোঝায় না তেমনি আবার দুটি শক্তি জোটের বাইরে থাকাকেও স্বীকার করে না। তাই জোটনিরোপেক্ষতা হলো -- সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও নয়া উপনিবেশবাদ বিরোধী এক শান্তিপূর্ণ সহবস্থান ।
![]() |
জঅত নিরোপেক্ষ তার নিদর্শন |
২. বিদেশী নীতির রূপকার
জোট নিরপেক্ষতা হলো বিদেশনীতির একটি চাবিকাঠি, তাই জোট নিরপেক্ষতার মাধ্যমে রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তিযোটের বাইরে তাদের অবস্থান কে সুদৃঢ় করেএবং প্রগতিশীল বিদেশ নীতি রূপায়িত করে ।
৩. নীরব দর্শক নয়
জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলি বিশ্ব রাজনীতিতে নীরব দর্শক হয়ে থাকতে চায়না, কারণ তারা প্রতিটি রাজনৈতিক ঘটনাকে বিচার , বুদ্ধি, বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে বিচার করে সর্বদা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
৪. ঐক্যের বাতাবরণ তৈরী
জোট নিরপেক্ষতার মধ্যে আছে একটি ঐক্যের অবদান বা ঐক্যের বাতাবরণ তাই জোট নিরোপেক্ষকারী রাষ্ট্রগুলি পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে শান্তি ও নিরপেক্ষতার বন্ধনে আবদ্ধ হতে চেয়েছিল ।
৫. গোষ্ঠী তৈরী নয়
জোট নিরোপেক্ষতায় বলা হয়েছে যে জোটহীন হয়ে সব কাজ করতে হবে, তাই কোনো দেশ তাদের নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে তুলতে কোনো জোট বা গোষ্ঠী তৈরী করতে পারবে না।
Jot-niropekko-nitir-boisisty-alochona.
৬. শান্তি উপাসক
শান্তি পূর্ন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বের উত্তেজনা এবং বিরোধের মীমাংসা করা জোট নিরপেক্ষতার উদ্দেশ্য। তাই জোটনিরোপেক্ষ আন্দোলন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবেশ করে সহযোগিতার পরিমণ্ডল কে বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতি এবং শান্তিপূর্ন উপায়ে বিরোধের মীমাংসার চেষ্টা করে।
![]() |
শক্তিশালী জোটের দেশ |
৭. স্বীকৃত উপাদান
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে ভিউগলিক অখণ্ডতাকে এবং সার্বভোমত্ত কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি স্বীকৃত উপাদান হিসাবে স্বীকার করা হয়।
৮. মন্তব্য
সুতরাং আমরা দেখতে পায় যে তৃতীয় বিশ্বে অনুসৃত জোট নিরপেক্ষ নীতিই হলো বিশ্ব শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের এক পরম কল্যাণকর আদর্শ। এই আদর্শ পৃথিবীর রুদ্ধশ্বাস সামরিক গোষ্ঠী বা জোটের রাজনীতিকে বর্জন করে। বিশ্বশান্তি ও শান্তি-সংহতির চেতনা কে তুলে ধরতে চায়, এই কারণে জোট নিরপেক্ষ নীতি তথা জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বিশ্বরাজনীতিতে এক শান্তিগামী নতুন পথের দিশা এবং অভিনব আলোক স্বরূপ, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
* আরো সমস্ত নোট পেতে লাইক করে বন্ধুকে শেয়ার করো।
Thank You... Come Again:)
ReplyDelete