পিয়াজের জ্ঞান তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো
বিংশ শতাব্দীতে যেসব তথ্য শিক্ষার ক্ষেত্রে নানা দিক থেকে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল পেঁয়াজের জ্ঞানতত্ত্ব তার মধ্যে অন্যতম। এই তথ্য শিক্ষার পাঠক্রম পদ্ধতি এবং এমনকি প্রচলিত গবেষণা পদ্ধতির ক্ষেত্রে নতুন চিন্তাধারা সূচনা করে তার তত্ত্বে তিনি দেখিয়েছেন যে বৌদ্ধিক বিকাশ নির্ভর করে অনেকগুলি মানসিক ক্রিয়া ও আচরণের উপর শিশুরা কিভাবে বাইরের জগত ও সামাজিক জগত সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে এবং তা নিজের মানসিক সক্ষমতা সঙ্গে যুক্ত করে নেয়, তাঁরই উপর নির্ভর করে শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশ। পিয়াজে তার এই ধারণাটিকে কয়েকটি পরিভাষার মাধ্যমে ব্যবহার করেছেন সেগুলি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেওয়া যাক -
গঠন / structure
যে মানসিক একক গুলি আমাদের অবদমন চিন্তন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে তিনি বলেছেন গঠন প্রকৃতপক্ষে গঠন হল বুদ্ধির সেই ধরনের কাজ যা গৃহীত তথ্যকে সংঘটিত করে জ্ঞানে রূপান্তরিত করে।
অভিযোজন / Adaptation
অভিযোজন দুইটি পরিপূরক মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সমন্বয় এর একটি হলো আত্তীকরণ অর্থাৎ নতুন তথ্য পরিবর্তন করে তাকে আত্মস্থ করার প্রক্রিয়া খাদ্য গ্রহণের সময় যেমন খাদ্য কে সরলতম অবস্থায় রূপান্তরিত করলে তা শরীরে অঙ্গীভূত হয় তেমনি গৃহীত তথ্যকে রূপান্তরিত করলে তবেই তা উপস্থিত সংঘটনের অন্তর্ভুক্ত হতে পার আর অভিযোজন এর দ্বিতীয় প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্তিকরণ এর ফলে উপস্থিত জ্ঞানের সংগঠনে কিছু পরিবর্তন ঘটে যার ফলে নতুন তথ্য তার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।আত্তীকরণ ও অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রক্রিয়ার ভারসাম্য আমাদের প্রজ্ঞামূলক বিকাশ এর প্রধান ভিত্তি থেকে পেঁয়াজে বলেছেন সুস্থিতি।
সংগঠিতকরণ / Organization
জ্ঞানের একক গুলির মধ্যে যে পারস্পরিক সংযোগ স্থাপনের প্রক্রিয়া তাকেই বলা হয়েছে সংগঠিতকরণ এর ফলে সরল চিন্তন প্রক্রিয়া থেকে আমরা ক্রমশ জটিল চিন্তার ক্ষমতা অর্জন করি এখানে যে ধারণা গুলির কথা বলা হয় সেগুলি পারস্পারিক সম্পর্ক অনুধাবন করে পিয়াজের তত্ত্ব সম্বন্ধে জানার প্রক্রিয়া সংগঠিতকরণ এর একটি উদাহরণ।
স্কিমা / Schema
সংগঠিতকরণ এর ফলে চিন্তন ও মানসিক সক্রিয়তার যেসব নির্মিত হয় তাকে বলা হয়েছে স্কিমা। স্কিমা হল প্রকার মানসিক প্রতিরূপ যা গঠন ও আচরণের সংগঠিত রূপ মাত্র। পিয়াজের তত্ত্বে আচরণ কথাটির পরিবর্তে উপাদান কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রজ্ঞার বিকাশ Cognitive Development
উপরের ধারণাগুলি এক করলে প্রজ্ঞার বিকাশ বলতে কি বুঝিয়েছেন সে সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায় তার মতে প্রজ্ঞার বিকাশ একটি সক্রিয় মানসিক প্রক্রিয়া ও তার ক্রমিক পরিবর্তন পরিবেশ থেকে যে শিশু আরোহন করে অভিযোজন ও সংগঠিত করণের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত তাকে স্থায়ী রূপান্তরিত করে তাই হলো প্রজ্ঞার বিকাশ এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রত্যেক মানুষকে চারটি স্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হয় --
Mother's day Best Wishes | Quotes | Status | Download
![]() |
Click Here |
সংবেদন সঞ্চালন স্তর / Sensori-motor stage (0-2)
প্রজ্ঞা বিকাশ এর প্রথম স্তর সংবেদন সঞ্চালন স্তর এই স্তরের স্থায়িত্ব জন্মের পর থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত প্রথম স্তরে শিশুদের না চিন্তা প্রক্রিয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ইন্দ্রিয় সংবেদন ও সমন্বয় । যে বস্তু বারবার ইনজয় গুলিকে উদ্দীপিত করে সেগুলোকেই সঞ্চালনমূলক অভিজ্ঞতার সাহায্যে স্কিমার অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার প্রক্রিয়া হল এই স্তরের বৈশিষ্ট্য। এই স্তরে বস্তুর স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই এই জন্য বাচ্চারা লুকোচুরি খেলতে মজা পাই।
প্রথম মাসের শিশু নিজের সহজাত রিফ্লেক্স প্রতিক্রিয়া গুলি সম্বন্ধে সচেতন হয় যেমন মলত্যাগ ইত্যাদি।
দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ মাস পর্যন্ত শিশুরা কিছু কিছু কাজ প্রথম শুরু করে এবং বারবার করতে থাকে যেমন আঙুল চোষা।
চার থেকে আট মাস বয়সে শিশুরা তার শরীরের বাইরে কোন কিছু ক্রিয়া বারবার করতে ভালোবাসে যেমন কোন খেলনা কে বারবার ঝাকানো।
8 থেকে 12 মাসের শিশুরা পূর্ববর্তী স্তর গুলিতে গঠিত স্কিমার মধ্যে সমন্বয় ঘটায় যেমন চলার সময় কোন বাধা থাকলে সেটা তারা সরিয়ে দেয়।
12 থেকে 18 মাস বয়সের শিশুরা বিশেষ উদ্দেশ্যে কোন কাজ বারবার করে শুধুমাত্র বারবর করার আনন্দই নয় তারা বারবার করে দেখতে চাই যে তার ফলে কি হয়!
প্রাক সক্রিয়তার স্তর / Pre Operational Stage ( 2 -7)
পিয়াজে সক্রিয়তা কথাটি ব্যবহার করেছেন মানসিক সক্রিয়তা বোঝানোর জন্য প্রজ্ঞা বিকাশ এর প্রথম স্তরে প্রত্যক্ষ সঞ্চালন ক্রিয়ার সাহায্যে যে ধারণা তৈরি হয় তার মানসিক প্রতিরূপ পরবর্তী পর্যায়ে বিকাশের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ এই স্কিমগুলি সরাসরি চিন্তন এর মাধ্যমে নতুন স্কিম গঠনের কাজে ব্যবহার করা কি পিয়াজে সক্রিয়তা বলেছেন। এই স্তরে শিশুরা বাস্তব বোধ সর্বপ্রাণবাদ কৃত্তিমতা বদ অবরোহ যুক্তি এক কেন্দ্রীকতা অহমিকা বিপরীত চিন্তায় অক্ষমতা বিলম্বিত অনুকরণ প্রতিকৃতি অঙ্কন মানসিক চিত্রকল্প এবং ভাষার নানা রকম ব্যবহার করতে শেখে।
মূর্ত সক্রিয়তার স্তর / Concrete Oprational Stage (7-11/12)
পূর্ববর্তী স্তরের সঙ্গে এই পর্যায়ের প্রধান পার্থক্য হল এই সময়ে শিশুরা হাতে কলমে কাজ করতে করতে মানসিক ক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে কিন্তু শুধুমাত্র ভাষা ব্যবহার করে তা করতে পারেনা পূর্ববর্তী পর্যায়ে ক খ ও গ এই তিনটি সত্তিকারের ছোট বড় বস্তু কোনটি কার থেকে ছোট বা বড় তা বলতে পারে কিন্তু সেগুলি সরিয়ে নিলে আর বলতে পারেনা এই স্তরের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল অভিন্নতাবাদ ক্রমিক অবস্থান শ্রেণীবিভাগ করতে পারে এই স্তরে ছাত্রছাত্রীরা সংখ্যার ধারণা পাই মুহূর্ত বস্তুর মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা হয় তার সাহায্যে মানসিক প্রতিরূপ গঠন ও মানসিকতার বিকাশ দ্রুততর হয় শিক্ষকদের পক্ষে প্রাথমিক শিক্ষার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
যৌক্তিক সক্রিয়তার স্তর / Formal Oprational Stage (12- Last Adolescent)
যৌক্তিক সক্রিয়তার স্তর যুক্তিনির্ভর জ্ঞান লাভের স্তর এই পর্যায়ে কিশোর-কিশোরীরা পূর্ববর্তী মুক সক্রিয়তার মাধ্যমে গঠন করে তাকে সরাসরি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। প্রকল্প গঠন করে তাকে অভিজ্ঞতা ও যুক্তির সাহায্যে গ্রহণ বা বর্জন করতে শেখে। তর্কবিদ্যা সম্মত বস অবরোহ যুক্তি তাদের প্রধান হাতিয়ার হয়ে গড়ে ওঠে। এই পর্যায়ে ছেলেমেয়েরা অতিরিক্ত সচেতন হয়ে ওঠার দরুন তারা মনে করে অন্যরাও তাদের মতো করে ভাবছে বা অন্যরা তাদের প্রতি সর্বদা লক্ষ্য রাখছে মনে রাখা দরকার বহু মানুষই কৈশোরকালে ও মুক্ত সক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তাদের চিন্তাকে পরিচালিত করে।
এই স্তরের অন্যতম কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো কৈশোরের বাস্তব ও সম্ভাবনার মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব হয় কিশোর কিশোরীদের চিন্তা প্রকল্প ভিত্তিক হয়ে থাকতারা যতদূর সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করে এবং তথ্য গুলিতে নানা রকম ভাবে সমন্বয় করে সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করে সামান্যীকরণ এই পর্যায়ের চিন্তার অন্তিম ফল।
Khub e informative
ReplyDeleteThanks....
Deleteখুব ভালো লাগলো। আপনার প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাই।
ReplyDeleteধন্যবাদ আপনাকে
Deleteচিন্তন সম্পর্কে লিখুন।
ReplyDelete