Lawrence Kohlberg : Moral Development Theory | কোহেল বর্গের নৈতিক বিকাশ তত্ত্ব




 কোহেল বর্গের নৈতিক বিকাশ তত্ত্ব | Moral Development of Kohlberg



Moral development by Kohlberg





    আমাদের ন্যায় অন্যায় ভালো-মন্দ বা উচিত অনুচিত বোধকে এক কথায় নৈতিক বোধ বলা হয়। এই নৈতিক বোধ ব্যক্তি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে থাকে। ১৯৫০ এর দশকে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা করে কোহেলবার্গ নৈতিক বিকাশ এর বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তার গবেষণার প্রাথমিক উৎস ছিল মনোবিজ্ঞানী পিয়াজের নৈতিক বিকাশ সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।



কোহেলবার্গ এর মত 



       কোহেলবার্গ পিয়াজের পদ্ধতির কিছুটা পরিবর্তন করেন। তিনি পরস্পর বিরোধী দুটি নৈতিক বিচারের পরিস্থিতি তুলে ধরে শিশুদের সিদ্ধান্ত জানতে চান। তার পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে তিনি পেঁয়াজের নৈতিক বিকাশের স্তর গুলির পুনর্বিন্যাস করে নিজস্ব তথ্য উপস্থাপিত করেন। তার মতে নৈতিক বিকাশ প্রজ্ঞার বিকাশের উপর নির্ভরশীল আর শিশুরা প্রজ্ঞার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার চারপাশের নানান ঘটনার ভালো মন্দ বিচার করতে শেখে, তার ভিত্তিতেই নৈতিক বিকাশের সূত্রপাত ঘটে।







     প্রজ্ঞার বিকাশ ঘটে প্রজ্ঞার দ্বন্দ্বর মাধ্যমে অর্থাৎ উপস্থিত যে ধারণা স্মৃতিতে সঞ্চিত আছে দ্বিতীয় একটি ধারণা যদি কিছুটা আলাদা হয় তবে দুই ধারণার মধ্যে যে বিরোধ ঘটে তাকে বলা হয় প্রজ্ঞার দ্বন্দ্ব। এই প্রজ্ঞার বিকাশ ও দ্বন্দ্ব ছড়াও তৃতীয় একটি বিষয় নৈতিক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে, এটি হলো ভূমিকা গ্রহণ করার ক্ষমতা। কোহেলবার্গ নৈতিক বিকাশের তিনটি স্তর এবং ছটি পর্যায়ের কথা বলেছেন যে গুলি হল -




প্রথম স্তর : প্রাক প্রথাগত নৈতিকতা




       এই স্তর 4 থেকে 10 বছর বয়স পর্যন্ত দেখা যায়। একে প্রাক প্রথাগত বলা হয়েছে কারণ এই সময় শিশুরা নিয়ম প্রথা ইত্যাদির প্রকৃত অর্থ বা কারণ কিছুই বোঝে না শুধু বাধ্য হয়ে এগুলো পালন করে। এই স্তরের দুটি পর্যায় -



প্রথম পর্যায়-

       প্রথম প্রথম শিশুরা শাস্তির ভয় অথবা পুরস্কারের লোভে নিয়ম প্রথা নির্দেশ ইত্যাদি পালন করে। 4 থেকে 7 বছরের শিশুরা বড়রা বকবে বা কেউ দেখে ফেলবে এই ভয়ে সে কোন অবাঞ্চিত কাজ করা থেকে বিরত থাকে। এই স্তরে শিশুদের মধ্যে শাস্তি আনুগত্য প্রকাশ পায়।



দ্বিতীয় পর্যায়ে -

        এই পর্যায়ের নাম আপেক্ষিক মুখী তা। সাত থেকে দশ বছর বয়সী শিশুরা নিয়ম-নীতি মানতে প্রস্তুত যদি অন্যরাও সেটা মেনে চলে। যেমন আমি ক্লাসে কথা বলেছি কারণ অন্যরাও বলেছে আমি মিথ্যা কথা বলবো না যদি তুমি না বল ইত্যাদি।






দ্বিতীয় স্তর : প্রথাগত নৈতিকতা






এই স্তরটি প্রথাগত নৈতিকতার স্তর কারণ এই সময় নৈতিক আচরণ এর নিয়ম কানুন এর তাৎপর্য বোধ হতে শুরু করে। এই স্তরের স্থায়িত্ব 10 বছর পর থেকে উত্তর কৈশোর পর্যন্ত। এই স্তরের দুটি পর্যায়ে হল - 





তৃতীয় পর্যায় -


       এই সময়ে ছেলে মেয়েরা মনে করে নিয়ম নতি মেনে চললে সবাই ভালো ছেলে বা ভালো মেয়ে হিসাবে মর্যাদা দেবে। সুতরাং প্রথাগত স্তরের প্রথমদিকে তারা ভালো ছেলে বা মেয়ে হিসাবে পরিচিত হওয়ার তাগিদে নিয়ম মেনে চলে। এই পর্যায়ে হলো ভালো ছেলে-মেয়ের নৈতিকতা পর্যায়।











চতুর্থ পর্যায় -


       এই পর্যায়ে টি হল আইন-শৃঙ্খলা ভিত্তিক নৈতিকতার পর্যায়। আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নিয়ম কানুন মেনে চলা উচিত, না হলে সমাজের বা অন্যদের ক্ষতি হতে পারে এ বিষয়গুলি এই পর্যায়ের ছেলেমেয়েরা উপলব্ধি করতে পারে। 








আরও সকল মনোবিজ্ঞানের প্রশ্ন ও উত্তর - 













তৃতীয় স্তর : উত্তর প্রথাগত নৈতিকতা






    পূর্বোক্ত দুটি স্তরে নৈতিকতার নির্ণয় কেন্দ্র ছিল ব্যক্তির বাইরে অর্থাৎ বাইরের কোন দীপকের ফলে ব্যক্তির আভ্যন্তরীণ পরিবর্তন। উত্তর প্রথাগত স্তরে নীতিবোধ ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব অন্তরের সম্পদ হিসেবে দেখা দেয়। এই স্তরের দুটি পর্যায় -





পঞ্চম পর্যায় -


      এই পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য হলো সামাজিক চুক্তি মুখী তা। যৌবনে মানুষ মনে করে আমি সামাজিক নিয়ম-নীতি মেনে চলবো কারণ সমাজ আমাকে সুরক্ষা দেবে। সুতরাং নৈতিকতা কোন কৃত্রিম নিষেধাজ্ঞা নয়। সমাজই এই নৈতিক বিধি স্থির করবে এবং সকলেই তা মেনে চলবে এই বিষয়গুলি এই পর্যায়ের ছেলে মেয়েরা বুঝতে পারে।





ষষ্ঠ পর্যায় -


       সর্বশেষ পর্যায়ে সর্বোচ্চ নীতিবোধ জাগ্রত হয়। একে বলা হয়েছে সার্বজনীন নৈতিকতা মুখী তা। এর অর্থ নীতিবোধ কোন বিশেষ ব্যক্তি বা সমাজের বিধিনিষেধ নয়, তা সার্বজনীন নৈতিকতার অঙ্গ। অনেকে সারা জীবনেও তৃতীয় স্তরের নৈতিকতা অর্জন করতে পারে না। 








কোহেলবার্গ তত্ত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্য : Significant of Kohlberg Moral Development






         কোহেলবার্গ তথ্য অনুযায়ী নৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিদ্যালয় এবং শিক্ষকদের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। বিদ্যালয়ের নিয়ম নীতি গুলি খুব স্পষ্টভাবে থাকে এবং তার সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একই আবার শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা কখনোই একরকম থাকে না সুতরাং শিক্ষকরা নৈতিক প্রসঙ্গটি স্পষ্ট ভাবে ব্যবহার করতে পারেন এ কারণে কয়েকটি বিশেষ পদক্ষেপ নৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ - 













  • নৈতিক দ্বন্দ্ব সমাধান প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীরাই করবে কিন্তু তা অবাঞ্চিত পথে গেলে যুক্তি ও উদাহরণ দিয়ে শিক্ষককে সঠিক পথে চালনা করতে হবে।

  • বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করার নিয়ম নীতি গুলি খুব স্পষ্টভাবে বলা দরকার এবং প্রয়োগ করার সময় শিক্ষক কোনরকম পক্ষপাতিত্ব করবেন না।

  • সমস্ত বয়সের ছাত্র-ছাত্রীর জন্য একই নৈতিক মান থাকতে হবে।

  • নীতি ভঙ্গের জন্য শাস্তি এবং নীতি প্রণয়নের জন্য পুরস্কার প্রাথমিকভাবে কার্যকর হলেও মনে রাখতে হবে নীতিবোধ এখানেই যেন আবদ্ধ না হয়ে থাকে।

  • ব্যক্তিগত এবং স্বাভাবিক ঘটনা থেকে নৈতিক উদাহরণ বেছে নিলে তা বিশেষভাবে নৈতিক বিকাশে ফলপ্রসূ হয়।

  • খোলামেলা আলোচনা দলগত নৈতিক দায়িত্ব ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতা অপেক্ষা দলগত প্রতিযোগিতা ইত্যাদি নৈতিক বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করে।


















Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

MP 2020 History MCQ suggestions, part 6th,

সপ্ত প্রবাহের নীতি। মাধ্যমিক কমিশনের সপ্ত প্রবাহের নীতি।

Four pillars of Education - শিক্ষার চারটি স্তম্ভ | Delors Commission 1997