সর্বশিক্ষা অভিযান (SSA) কি, সর্বশিক্ষা অভিযানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও অভিযানের কর্মসূচি সম্পর্কে আলোচনা করো।
সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষাকে বাস্তবে রূপায়ণ করতে যে সমস্ত প্রকল্প গুলি সরকার দ্বারা গ্রহণ করা হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সর্বশিক্ষা অভিযান। সবার জন্য শিক্ষা এই প্রকল্পে এই পরিকল্পনাকে গ্রহণ করা হয়েছিল।
ভারতীয় সংবিধানের নীতি নিয়মকে মেনে নিয়ে সর্বশিক্ষা অভিযানে 6 থেকে 14 বছরের সমস্ত শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
- এখানে একটু কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আলোচনা করে দিন যেহেতু সর্বশিক্ষা অভিযান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং আমাদের সিলেবাস এর একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব।সেই কারণে আমি এখানে একটু ডিটেইলস বা বিশদভাবে সর্বশিক্ষা অভিযান কে আলোচনা করছি এর যেকোনো একটি পার্ট নিয়ে একটি চার মার্কের প্রশ্ন হতে পারে সুতরাং প্রত্যেকটি বিষয় তোমাদের দেখে নেওয়া উচিত।
১৯৯৯ সালে সংবিধানের 86 তম সংশোধনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সেই সঙ্গে ওই বয়সের অর্থাৎ 6 থেকে 14 বছর বয়সের প্রত্যেক শিশুকে বিদ্যালয়ের পাঠানোর দায়িত্ব অভিভাবকদের উপর প্রেরণ করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে 2000 সালে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের শুরু করা হয়। পরে 2011 সালে এটি সর্বশিক্ষা মিশন নামে পশ্চিমবঙ্গে রূপায়িত হয়েছে। আর আমাদের রাজ্যে 2003 সাল থেকে সর্বশিক্ষা অভিযান শুরু হয়।
সর্বশিক্ষা অভিযানের ধারণা / concept of SSA
- 6 থেকে 14 বছর বয়স্ক প্রতিটি শিশুকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গুণগত শিক্ষাই সুনিশ্চিত করা এই প্রকল্পের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।
- সর্বশিক্ষা অভিযান একটি নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার কাছে অতিরিক্ত সহায়ক শক্তি কিংবা বলা যেতে পারে একটি বাড়তি সুযোগ।
- প্রাথমিক শিক্ষার স্বপক্ষে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটানো।
- বুনিয়াদি শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।
- সর্বশিক্ষা অভিযান একটি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের এমনকি স্থানীয় সংস্থাগুলির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি প্রকল্প।
সর্বশিক্ষা অভিযানের লক্ষ্য ও সময়সীমা / aim of SSA
- 2007 সালের মধ্যে সকল শিশুকে পাঁচ বছরের নিম্ন প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করা।
- ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা।
- কুসংস্কারমুক্ত বিজ্ঞান চেতনা মূলক সমাজ তৈরি করা।
- শিক্ষা ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য ও অন্যান্য সামাজিক বৈষম্য দূর করা।
- 6 থেকে 14 বছর বয়সী সকল ছেলেমেয়েকে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকের সুনিশ্চিত করা।
- 2010 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সকল শিশুকে 8 বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন।
- জীবন ধর্ম শিক্ষার গুরুত্ব আরোপ করে গুণগত মান অর্জনে সহায়তা করা।
- 2010 সালের মধ্যে 5 থেকে 14 বছর বয়সের সকল শিশুকে বিদ্যালয়ে ধরে রাখা সুনিশ্চিত করা।
সর্বশিক্ষা অভিযানের বিভিন্ন কর্মসূচি
- সর্বশিক্ষা অভিযান কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
- পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য স্কুল গ্রাম ও ওয়ার্ড শিক্ষা কমিটির সঙ্গে যুক্ত করে গুচ্ছ সম্পদ তৈরি করা হয়েছে।
- সর্বশিক্ষা অভিযান কে সফল করে তুলতে ব্রিজ কোর্স / সেতু পাঠক্রম চালু করা হয়েছে।
- প্রাথমিক শিক্ষার পরে শিক্ষার্থীরা যাতে পুনরায় নিরক্ষর না হয়ে পড়ে তার ব্যবস্থা করা।
- সরকারি আধাসরকারি ও বেসরকারি সংস্থা গুলিকে একত্রিত করে সর্বশিক্ষা অভিযানের কর্মসূচি গ্রহণ করে তা রুপায়ন করার ব্যবস্থা করা।
- পরিকাঠামো ও পরিষেবা উন্নতির জন্য চক্র সম্পদ গঠন করা।
- 6 থেকে 14 বছর বয়সের সমস্ত ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয় ভুক্ত করা।
- পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে তারা বিদ্যালয় ছুট না হয়।
- যারা প্রকৃত ভাবে দুস্থ এমন অভিভাবকদের জন্য অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
- বিদ্যালয় মূল্যায়নের ফল নিয়মিতভাবে অভিভাবকদের দৃষ্টিতে আনতে হবে।
- যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে তাদেরকে তুলে ধরতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
- শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য গুচ্ছ সম্পদ কেন্দ্র কে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে।
- বিদ্যালয়ের যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের গুণগতমান বৃদ্ধি করতে সহায়ক সেই সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতে হবে।
এছাড়াও সর্বশিক্ষা অভিযানেরজন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল যেগুলি এখানে আলোচনা না করলেও যথেষ্ট।
পশ্চিমবঙ্গে সর্বশিক্ষা অভিযানের অগ্রগতি
সরকারের একটি উদ্দেশ্য ছিল সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে 2010 সালের মধ্যে সমস্ত 14 বছর বয়সী শিক্ষার্থী বা ছেলেমেয়েকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রকল্পকে পূরণের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্কুল চলো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
প্রত্যেকটি গ্রামে ভিলেজ এডুকেশন কমিটি গঠন করা হয় যার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে তুলে সর্বশিক্ষা অভিযানের আওতায় নিয়ে আসা যায়। সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্দেশ্য পূরণে পশ্চিমবঙ্গ আর যে সমস্ত কাজ করেছিল সেগুলি হল -
- প্রতিটি বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত এই 14 বছর বয়স্ক সমস্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য নির্মিত হয় অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ।
- মহিলাদের শিক্ষা বিষয়ে এবং তালিকাভুক্ত শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
- বিদ্যালয়ে শিক্ষকের চাহিদা পূরণের জন্য প্যারাটিচার বা পার্শ্ব শিক্ষকের ব্যবস্থা করা হয়।
- বিদ্যালয়ের শৌচাগারের উন্নয়ন পানীয় জল সরবরাহ নূন্যতম শিক্ষা সামগ্রী ও স্বাস্থ্যবিধির উন্নতি এ সকল বিষয়ের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
- গ্রাম অঞ্চল বা শহর অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের সর্ব শিক্ষার কাজকে বাস্তব করার জন্য গ্রামীণ শিক্ষা কমিটি অথবা ওয়ার্ড স্তরে শিক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
- বিদ্যালয় ছোট হতে পারে এমন ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা হয়েছে এবং তাদের বিদ্যালয় ধরে রাখার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
- প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পৌঁছে অভিভাবকদের বুঝিয়ে তাদেরকে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সর্বশিক্ষা অভিযানের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান
প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করতে গিয়ে যে সমস্ত পরিকল্পনা করা হয় তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ছিল এই সর্বশিক্ষা অভিযান। কিন্তু এই সর্বশিক্ষা অভিযান কে বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এমনকি অনেক নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও এই সকল সমস্যাকে সমাধানের পথ বের করা হয়েছিল।
সর্বশিক্ষা অভিযান কে বাস্তবে রূপ দিতে গেলেদেখা যায় প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো বিদ্যালয়গুলিতে ছিল না সেই কারণে বিদ্যালয় গুলিকে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উপযুক্ত করে তোলা হয়েছিল।
আমাদের দেশে বহু ছেলে মেয়ে অভুক্ত থাকার কারণে তারা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি এই কারণে বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল এর ব্যবস্থা করে তাদেরকে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
নির্দিষ্ট দূরত্ব বরাবর প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র গুলি শিক্ষা কেন্দ্র গুলি না থাকার জন্য এই সকল শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারত না এই কারণে সেই সকল স্থানে নতুন করে বিদ্যালয় গঠন করা হয়েছে।
সর্বশিক্ষা অভিযানের জন্য বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকের চাহিদা দেখা দিয়েছিল এই কারণে সরকার কর্তৃক যথেষ্ট পরিমাণে শিক্ষকের ব্যবস্থা করে দেয়া হয় স্কুলগুলিতে।
- সর্বশিক্ষা অভিযানের যে বিষয়গুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষাতে আসার মত আমি সেই সকল বিষয় গুলি ধরে আলোচনা করে দিয়েছি এবং প্রত্যেকটি পার্ট 4 মার্কের মতো করে আলোচনা করলাম যাতে এখান থেকে যেকোন একটি টপিক বা বিষয় নিয়ে আসলে তুমি চার মার্কের মতো করে উত্তর দিতে পারবে।
- অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করার 10 টি সহজ উপায়।
- একটি মাইক্রো নিস ওয়েবসাইট বানিয়ে মাসে 2000 ডলার ইনকাম।
- কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের বড় প্রশ্ন ও উত্তর।
- ভাত গল্পের বড় প্রশ্ন ও উত্তর।
- ভারত বর্ষ গল্পের বড় প্রশ্ন ও উত্তর।
- রূপনারানের কূলে কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর।
- শিকার কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর।
- মহুয়ার দেশ কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর।
- আমি দেখি কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর।
- ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর ।
গ্রামে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যতিত শিশু শিক্ষাকেন্দ্র ও বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিস্থা করা হয়েছে যেখানে গ্রাম থেকেই শিক্ষক নিয়োগ ও আধিকারিক নিয়োগ করলে ভালো হয় এবং শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক /শিক্ষিকা গণ যেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত না থাকেন। এইসব শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনার ভার গ্রাম পঞ্চায়েত ও বিডিও'র উপর থাকবে। এই শিক্ষা কেন্দ্রগুলোর আসল কাজ হবে বেসিক এডুকেশন দেওয়া ও স্বনির্ভরতার শিক্ষা দেওয়া এবং স্বনির্ভর হতে আর্থিক সাহায্য দেওয়া বিডিও'র মাধ্যমে।
ReplyDelete