বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর।

    উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের বিভাব নাটকটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হলো। বিভাব নাটক থেকে যেসকল বড় প্রশ্ন গুলি উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের জন্য নির্বাচিত বা গুরুত্বপূর্ণ শুধু সেগুলো নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো। অর্থাৎ দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের বিভাব নাটকের এই প্রশ্নগুলি পড়লে তুমি যথাযথভাবে উত্তর লিখতে পারবে। বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর

বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর।



বিভাব নাটকের বিষয়বস্তু 


     সমাজ জীবনে অভাব থেকে বিভাব নাটকের জন্ম হয়েছে বলে নাট্যকার শম্ভু মিত্র আমাদের জানিয়েছেন। অনেকদিন ধরে থিয়েটার না চলার জন্য নাট্যকার সহ বৌদি ও অমর গাঙ্গুলী নামে একটি চরিত্র ব্যক্তি জীবনে সাধারণ হাসির খোরাক এর জন্য খুঁজতে চেষ্টা করেছে একটু অভিনয়। বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর



    তাদের তিনজনের ধারণা অভিনয়ের মাধ্যমে জীবনে একটু হাসির খোরাক আনা যেতে পারে। সেই কারণে তারা একটি লাভ সিন করার পরিকল্পনা করে। নাটকটিতে আমরা এরকম দুটি লাভ সিন দেখতে পারি। কিন্তু সামান্য হাসি যোগান দিতে গিয়ে এই লাভ সিন দুটিও সার্থকভাবে পরিকল্পিত রূপ লাভ করতে পারেনি।

   যখন লাভ সিন এর মাধ্যমে হাসির খোরাক পাওয়া গেল না তখন নাট্যকার শম্ভু মিত্র ঘরের চার দেয়ালের বাইরে থেকে বাইরে বেরোনোর পরামর্শ দেন। যখন তারা হাসির খোরাক খোঁজার জন্য রাস্তায় নামেন তখন দেখতে পান অগণিত মানুষের মিছিল, যারা অন্য আর বস্ত্রের দাবি জানাতে থাকে। 



    উল্টোদিকে পুলিশকে আসতে দেখে শম্ভু মিত্র ও অমর গাঙ্গুলী পালিয়ে যান কারণ তারা বাস্তবের সঙ্গে নাটক টা কে একটু ঝালিয়ে নিতে চেষ্টা করেছিলেন। তাদের এই প্রচেষ্টার পর শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলীর কাছে জানতে চান যে এতে তাদের হাসি পেয়েছে কিনা। এর উত্তরে তিনি নিজেই মন্তব্য করেছিলেন এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে ?"বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর





"আমার মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত 'অভাব' নাটক।"  - বিভাব নাটকে কিভাবে অভাব চিত্রটি প্রকাশ পেয়েছে তা আলোচনা করো।


    কোন সাহিত্যের নামকরণ সাধারণত তার বিষয়কে কেন্দ্র করে বা রূপক ধর্মী ও ব্যঞ্জনা ধর্মী হয়ে থাকে। কিন্তু নাট্যকার শম্ভু মিত্রের বিভাব নাটকটি পাঠ করলে বোঝা যায় এর নামকরণ অন্য সকল সাহিত্যের মাপকাঠি কে স্পর্শ করেনি। কারণ প্রথমেই জানতে পারি জনৈক ভদ্রলোক পুরনো নাট্যশাস্ত্র ঘেঁটে শম্ভু মিত্র রচিত নাটকের নাম দিয়েছিলেন বিভাব। বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর

    নাট্যকার নিজেই এই নাটকের নামকরণের সঙ্গে বিরোধ অনুভব করেছেন। বিভাব শব্দ থেকে ইনাকি অনুভূতির সৃষ্টি হয়। নাট্যকার নাটকের সার্বিক বিচারে অনুভব করেছিলেন তাদের এই নাটকের নাম হওয়া উচিত অভাব, এর কারণ হিসেবে তিনি দেখেছেন চরম অভাব থেকে এই নাটকের উৎপত্তি। বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর



    কারণ স্বরূপ বলা যায় শুধুমাত্র নাটক করার প্রবল ইচ্ছা থেকে নাটকের জন্ম হচ্ছে সেখানে নাটক করার মতো কোনো পরিবেশ নেই অর্থাৎ সকল কিছুই অভাবে বিরাজমান। নাটকটি আসলে মন্বন্তরের প্রেক্ষাপটে রচিত। এই কারণে যেখানে মানুষের দৈনন্দিন জীবন বাঁচানোর সামান্য প্রয়োজনীয় বস্তু নেই সেখানে নাটকের প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে না।


     মানুষ যেখানে নিজের জীবনকে বাঁচাতে ব্যস্ত সেখানে আনন্দের অবসর খুব গ্রহণীয় হয় না। নাট্যকার ও তার সহযোগীরা নাটক করতে অত্যন্ত ব্যাস্ত ও আকাঙ্ক্ষিত হলেও সরকার তাদের বিপক্ষে। গ্রুপ থিয়েটার করার প্রয়োজন হলে তাতে অর্থের প্রয়োজন হয়ে পড়ে সুতরাং সেখানে লাভের স্থান থাকে না। আর এরকম প্রতিকূল পরিবেশে নাটক বস্তুটি যে কত কঠিন তা নাট্যকার অনুভব করতে পেরেছেন। সেই কারণে নাট্যকার চরম অভাবের চিত্রটি বিভাব নাটকের মধ্যে তুলে ধরেছেন।






"তাদের অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইন সাহেব অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত হয়ে অনেক কথা লিখেছেন।" - আইজেনস্টাইন সাহেব কে ? তিনি কাদের অভিনয় দেখে উচ্চসিত হয়েছিলেন ? সেই অভিনয় দেখে তিনি কি লিখেছিলেন ?


     প্রখ্যাত নাট্যকার শম্ভু মিত্র রচিত বিভাব নাটকে আইজেনস্টাইন সাহেব হলেন প্রখ্যাত এক রাশিয়ান চিত্রপরিচালক। বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর




    রাশিয়ান চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইন জাপানের নৃত্য নির্ভর ঐতিহ্যশালী কাবুকি থিয়েটার এর অভিনেতাদের অভিনয় দেখে উচ্চসিত হয়েছিলেন।


    প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইন সাহেব জাপানের নৃত্য নির্ভর ঐতিহ্যশালী কাবুকি থিয়েটার এর অভিনেতাদের অভিনয় দেখে আনন্দিত হয়ে বলেছিলেন যে, কাবুকি থিয়েটার এ শরীর এবং মুখের ভঙ্গি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। এর উদাহরণ স্বরূপ তিনি আরো বলেছিলেন মঞ্চস্থ একটি নাটকে একজন নাইট রেগে গিয়ে দুর্গ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন এবং কত দূর চলে এলেন শুধু তাকে বোঝাতে তিনি স্টেজের পিছন থেকে গম্ভীর ভাবে এগোতে থাকেন। এবং সিফটার তার পিছন দিকে দুর্গের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল।

    তার আরো ভালো লেগেছিল তলোয়ার যুদ্ধের দৃশ্য দেখে, যেখানে দুই যোদ্ধা খাত থেকে তরল বের করে কাল্পনিক যুদ্ধ করতে থাকে। এবং একজন অন্যজনকে খোঁচা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ।  মরার আগে একবার তার হাতটা নড়ে উঠলো, শরীরটা কেপে উঠলো, চোখটা দুবার ঘোরালো, মাথাটা নড়লো ও সবশেষে তার জিভ বেরিয়ে গেল।বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর





    এই ঘটনার পরে স্টেজে তার স্ত্রী ঢুকে প্রবল কান্নাকাটি শুরু করলেন তখন কিন্তু সেই মৃত লোকটা উঠে আস্তে আস্তে চলে গেছেন কারণ দর্শকদের কাছে তার কোন প্রয়োজন ছিল না। প্রয়োজন ছিল তার স্ত্রীর শোক প্রকাশ করার দৃশ্য টিকে। এইসকল বর্ণিত দৃশ্যগুলি আইজেনস্টাইন সাহেব বলেছিলেন বলে বিভাব নাটকে আমরা পেয়ে থাকি।



"আমরা বাঙালিরা শুনি কাঁদুনে জাত..." - উক্তিটি কার ? মন্তব্যটি নাটকের ক্ষেত্রে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা আলোচনা করো ।


    আলোচ্য উক্তিটি শম্ভু মিত্র রচিত বিভাব নাটকের অভিনেতা অমর গাঙ্গুলীর। বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর




     জীবনের অন্যতম হাসির খোরাক খুঁজতে গিয়ে নাটকের অন্যতম চরিত্র শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলীর বাড়িতে উপস্থিত হয়। আলোচ্য প্রসঙ্গটি মধ্য দিয়ে তাদের নাটকটি শুরু হয়েছে বলে তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। নাট্যদলের সম্পাদক অনেক ভেবে চিন্তে বক্সঅফিসের চাহিদার কথা মাথায় রেখে একটি হাসির নাটক অভিনয় করবে বলে মনে করেছেন। 

    এরপর হাসির খোরাক এর প্রয়োজন বলে তারা একের পর এক প্রেমের দৃশ্যে অভিনয় করতে থাকেন। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা নাটকে কোনরকম হাস্যরস সৃষ্টি করতে পারেনি। আসলে নাটক স্বতঃস্ফূর্ত তাকে জোর করে অভিনয় করতে যাওয়া বৃথা প্রচেষ্টা। যখন নাট্য দৃষ্টি ব্যাহত হয় তখন তারা বাস্তবে রাস্তায় নেমে আসে। 

     বাস্তবের রাস্তায় নেমে এসে দেখতে পায় ক্ষুধার্ত মানুষের মিছিল। সেই মিছিলের ওপর পুলিশের গুলি আর মানুষের হাহাকার । এসকল বিষয়টিকে শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলী কে জিজ্ঞাসা করে, - তার এবার হাসি পাচ্ছে কিনা ? আসলে এখানে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সুর প্রকাশিত হয়েছে।বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন ও উত্তর





     আসলে নাটকের নাট্যকার এবং অভিনেতা শম্ভু মিত্রের মুখে সম্পাদক হাসির নাটক করার অনুরোধ করেছেন তা শুনে সহ-অভিনেতা অমর গাঙ্গুলী বলেছেন বাঙালিরা নাকি কাঁদুনে জাত। অর্থাৎ এখানে হাসির নাটক বা লাভ সিন এর বিপরীত চিত্র আমাদের সামনে ফুটে উঠেছে।



"বিভাব" নাটকটি একাঙ্ক হিসেবে কতখানি সার্থক তা আলোচনা করো।


     সাধারণত অংকের বিচারে নাটক প্রথমে পাঁচ অঙ্কবিশিষ্ট হত। কিন্তু আধুনিক যুগে লক্ষণ ও প্রয়োজন অনুসারে নাটকের আঙ্গিকে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। আধুনিক এই সকল পরিবর্তনের ফলশ্রুতি হলো একাঙ্ক নাটক বা একাঙ্কিকা। আমাদের আলোচ্য বিভাব নাটকের সূচনা অংশে নাট্যকার নিজেই নাটকটিকে একাঙ্কিকা বলে উল্লেখ করেছেন। একাংকিকা নাটক বলতে বোঝায় আয়তনে ছোট অর্থাৎ এক অঙ্কবিশিষ্ট এবং নট নটির সংক্ষিপ্ততা। 



    আলোচিত বিভাব নাটকটি সত্যিই একটি যথাযথ একাঙ্ক নাটক কিনা সে বিচারে অগ্রসর হলে আমাদের দেখে নিতে হবে নাটকটি একাঙ্ক নাটকের সমস্ত বৈশিষ্ট্যকে মেনে চলেছে কিনা। 

     এখন কোন নাটকের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো স্বল্প চরিত্র। আমরা বিভাব নাটকে মাত্র তিনটি চরিত্রের সমাবেশ লক্ষ্য করি সুতরাং চরিত্রগত দিক থেকে নাটকটি বৈশিষ্ট্য পালন করেছে।

    একাঙ্ক নাটকের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য একটি বিষয়কে লক্ষ্য রাখা। বিভাব নাটকে  শুধুমাত্র হাসির খোরাক সন্ধান এর উদ্দেশ্যে নাটকটি রচিত হয়েছে।

    সমস্ত নাটক এবং একাঙ্ক নাটকের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ক্লাইম্যাক্স বা শীর্ষ মুহূর্ত। বিভাব নাটকে ও আমরা এই বৈশিষ্ট্যটি কে লক্ষ্য করতে পারি। অনেক চেষ্টার পরও যখন নাটক হাসির উদ্রেক হয় নি তখন রাস্তায় নামলে নাটকের ক্লাইম্যাক্স শুরু হয়। তখন শম্ভু মিত্রের মন্তব্য নাটকের চূড়ান্ত পর্যায়ে তুলে ধরেছে।


     উপরের এই বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ্য করলে দেখা যায় আলোচিত বিভাব নাটকটি একাঙ্ক নাটকের বৈশিষ্ট্য গুলিকে যথাযথভাবে মেনে রচিত হয়েছে। সুতরাং একটি সার্থক একাঙ্কিকা সে বিষয়ে কোনো মতভেদ থাকে না। 







Comments

  1. Important question চাই আমার

    ReplyDelete
  2. Excellent work for students of all English language and literature

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

MP 2020 History MCQ suggestions, part 6th,

সপ্ত প্রবাহের নীতি। মাধ্যমিক কমিশনের সপ্ত প্রবাহের নীতি।

Four pillars of Education - শিক্ষার চারটি স্তম্ভ | Delors Commission 1997