গারো পাহাড়ের নীচে প্রবন্ধের বড় প্রশ্ন ও উত্তর | আমার বাংলা | সুভাষ মুখোপাধ্যায়

      লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আমার বাংলা প্রবন্ধ গ্রন্থের গারো পাহাড়ের নীচে প্রবন্ধ থেকে যেসকল প্রশ্নগুলি উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এখানে সেই সমস্ত বিষয়গুলি উপযুক্ত নোটস এর মত করে আলোচনা করা হলো। তোমরা প্রয়োজনমতো এই নোটগুলি তোমাদের খাতায় লিখে নিতে পারো। 

"গারো পাহাড়ের নীচে" প্রবন্ধের বড় প্রশ্ন ও উত্তর | আমার বাংলা | সুভাষ মুখোপাধ্যায়




গারো পাহাড়ের নীচে প্রবন্ধের বিষয়বস্তু : 


     লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় একদা বাংলাদেশে ঘুরতে গিয়ে নিজের চোখে যা দেখেছে তাই তিনি তার খাতায় লিপিবদ্ধ করেছিল। তিনি কোনদিন ভাবতেও পারেনি সে তার এই লেখাগুলো একদিন মানুষের কাছে এত আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। তিনি বাংলা কে যেভাবে নিজের মতো করে দেখেছে সেই সমস্ত কথাগুলো তার এই প্রবন্ধ গুলিতে আমরা পেয়ে থাকি। 

     সুভাষ মুখোপাধ্যায় গারো পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী কয়েকটি উপজাতির সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা এবং তাদের বসবাসের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা গারো পাহাড়ের নীচে প্রবন্ধের তুলে ধরেছেন। গারো পাহাড়ের নীচে প্রবন্ধ থেকে আমরা এই সকল জনজাতির বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারি। 




    বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে তারা পাহাড়ের ধাপে চাষবাস করে। তারা এখানে চাষ বাস করার জন্য শুকনো পাতাতে চৈত্র মাসের দিনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর ফলে তারা হিংস্র পশু পাখি থেকে বাঁচতে পারে। এরপর ওই পাতা পুড়ে ছাই হলে তার উপর ফসলের বীজ ছড়িয়ে দেয়, জন্ম নেয় নতুন চারা গাছের। এখানে যে সকল সম্প্রদায়ের মানুষেরা বাস করে তারা  হাজং, গারো, কোচ, বানায়, ডালু ইত্যাদি।


     গারো পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা মাচার  মতো ঘর করে বসবাস করে। একসময় জমিদারের কঠোর অত্যাচার তারা সহ্য করেছে, প্রজারা জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে, তার ফলে বর্তমানে তাদের কাছে সেই অত্যাচার এখন গল্প। লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় মতামত দিয়েছেন আমাদের মতো তারাও বাঙালি হলেও কিন্তু আমরা ওদের অনেক দূরে সরিয়ে রেখেছি।





"কিন্তু হাতি বেগার আর চললনা।"  -  হাতি বেগার কি ? কেন হাতি বেগার আর চলল না ?


    পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আমার বাংলা গ্রন্থের গারো পাহাড়ের নীচে গল্পে আমরা হাতি বেগার নামে একটি আইনের কথা জানতে পারি।ময়মনসিংহ জেলার সুসং পরগনার জমিদারেরা নিজেদের মজার জন্য পাহাড়ের উপরে বাসা বেধে বসে থাকতেন। জমিদারেরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এবং সিপাহী সহকারে সেই মাচার উপরে বসে থাকতো হাতি শিকার করার জন্য।

     মস্ত হাতি যাতে জমিদারের কোন ক্ষতি করতে না পারে তার জন্য তিনি সমস্ত রকম ব্যবস্থা করে রাখতেন। অন্যদিকে গ্রামের যুবক ছেলেদের সেই মত্ত হাতিকে ঘিরে তাড়াতে হত। এর ফলে গ্রামের অনেক যুবকের অকালে প্রাণ ও যেত। এমনকি এই শ্রমের কোনোরকম পারিশ্রমিক ছিল না। এইভাবে যখন সেই মত্ত হাতি জমিদারের মাচার দিকে ছুটে আসত তখন জমিদার হাতি শিকার করে মজা পেত।




     জমিদারের এই অহেতুক মজার জন্য প্রতিবছর গ্রামের অনেক যুবক ছেলেদের প্রাণ যেত হাতির পায়ের তলায় কখনো বা সাপের কামড়ে। লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় জমিদারদের এই অত্যাচারের কাহিনী কে হাতি বেগার আইন বলে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।


>> সুসং পরগনার জমিদারদের এই অত্যাচারের কাহিনী বেশিদিন ধরে টিকে ছিল না। কারণ জমিদারেরা এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে এক হয় জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তাদের এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল গোরাচাঁদ মাস্টার। গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে এই বিষয় নিয়ে মিটিং শুরু হয়, এমনকি তারা বিভিন্ন রকম অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করতে থাকে। গারো পাহাড়ের এসকল জনজাতি জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে হেরে গেলেও জমিদাররা আর এই ঘটনার পরে সেই অমানুষিক প্রথা টিকিয়ে রাখতে পারেনি।





গারো পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী বিভিন্ন জনজাতির জীবনযাত্রার পরিচয় দাও।


     লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আমার বাংলা প্রবন্ধ টি সাধারণভাবে একটি ভ্রমণ মূলক প্রবন্ধ। তিনি সমগ্র বাংলাদেশ ভ্রমণ করে বাংলাদেশের যেসকল রূপকে তিনি নিজের চোখে দেখেছেন তাকে তিনি এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন। এই কারণে গারো পাহাড়ের নীচে প্রবন্ধে আমরা তার নিজের চোখে দেখা বিভিন্ন উপজাতির জীবনযাত্রার পরিচয় পেয়ে থাকি। 

     গারো পাহাড়ের নীচে সুসং পরগনায় হাজং জাতি রা বসবাস করে। হাজং কথার অর্থ হল চাষের পোকা। আসলে গারো পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী এই জনজাতির মানুষেরা নাকি চাষবাসে খুব দক্ষ। তারা চাষ বাস করার জন্য নারী-পুরুষ উভয়েই একসঙ্গে কাজ করে। পাকা ধান কাটার সময় নারী-পুরুষ উভয়ের কাস্তে হাতে করে ধান কাটে।




    এসব দেখে তাদের জীবনকে এক কথায় সুখী মনে হলেও তাদের জীবনে অভিশপ্ত দিনগুলি ও বিরাজ করে। এতো সুখের দিনে হাজংদের জীবনে জমিদারের কুনজর বা অভিশাপ নেমে আসে। তাই ফসলের অল্প পরিমাণ তারা ভোগ করে আর সবই জমিদারকে দান করতে হয়।

    লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় গারো পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী মানুষদের উপর একটি অত্যন্ত অত্যাচারের কাহিনী আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। আগেকার হাতি বেগার নামে একটি প্রথা এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অভিশপ্ত হয়ে উঠেছিল। যদিও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সেই প্রথা  থেকে তারাও কিছুটা মুক্তি পেয়েছে।


    অনেক বছর আগে গারোদের বেঁচে থাকতে কোন সমস্যা ছিল না।কিন্তু এখন দুমুঠো ভাতের জন্য তাদের ভিক্ষা করতে হয় কেননা তারা আমাদের মতো বাংলাদেশে বসবাস করেও মনেপ্রাণে বাঙালি হতে পারেনি। আর তারা আমাদের মতো যেহেতু বাঙালি হয়ে উঠতে পারিনি তাই আমরাও তাদের নিজেদের আপন করে নিতে পারিনি।





"এত ফসল, এত প্রাচুর্য - তবু কিন্তু মানুষ গুলোর দিকে তাকালে মনে হয় জীবনে তাদের শান্তি নেই।"  -  কোন মানুষগুলোর কথা বলা হয়েছে ? কেন তাদের জীবনে শান্তি নেই ? 


    লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আমার বাংলা প্রবন্ধের গারো পাহাড়ের নীচে গল্পের মধ্যে সুসং পরগনায় বসবাসকারী বিভিন্ন উপজাতি দের কথা আলোচ্য লাইনটিতে বলা হয়েছে।


     লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় বাংলাদেশের সুসং পরগনা কে যেভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তাকে সাধারণভাবে দেখলে এখানে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রার দুঃখের দিন গুলোকে অনুভব করা যায় না। এই কারণে সৌন্দর্য বর্ণনার পাশপাশি তিনি সুসং পরগনার বসবাসকারী হাজং, গারো ইত্যাদি উপজাতিদের উপর বিভিন্ন অত্যাচারের বর্ণনা দিয়েছেন।




     গারো পাহাড়ের উপর থেকে যদি নিচের এই গ্রাম গুলির দিকে তাকানো যায় তবে দেখা যাবে চারিদিকে শুধু ধান আর ধান। ধান পাকলে এই জনজাতির জীবনে নতুন আনন্দ। তারা সবাই হাতে কাস্তে নিয়ে সেই পাকা ধান কাটতে মাঠে নামে। ধান কেটে মাথায় আর পিঠে করে ছোট ছোট ছেলের দল বাড়ির খামারে ফিরে আসে। 

    কিন্তু তাদের চাষ করা এই ফসলের অধিকাংশই তারা ভোগ করতে পারে না কারণ জমিদারকে দিয়ে দিতে হয়। ফসলের সময় গ্রামবাসীরা নাগরা জুতোর খটখট শব্দ শুনতে পেত, ছোট ছেলে মেয়ে গুলো ভয়ে মায়ের আঁচল জরিয়ে ধরত। এই জমিদারদের বিরুদ্ধে গ্রামের বয়স্করা যথেচ্ছারে গালাগালিও করত।


    জমিদারের এই কঠিন অত্যাচার তাদের জীবনে ছিল অভিশাপের মতো। এই অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য নিজেরা গান বেঁধেছিল। তাদের এই সুখের জীবনে শুধুমাত্র জমিদার এই শব্দটি ছিল অভিশপ্ত। কারণ জমিদারের কঠিন শাসনে তাদের জীবনে কোনো শান্তি ছিলনা।।





"যেন রাবণের চিতা - জ্বলছে তো জ্বলছেই"  -  রাবণের চিতার মতো আগুন কোথায় কী উদ্দেশ্যে জ্বলেছিল ? এই আগুন থেকে তাদের কি সাহায্য হয় ? 


    লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় বাংলাদেশে ঘুরতে গিয়ে দেখেছেন গারো পাহাড়ের নীচে সুসং পরগনার মানুষের জীবনযাত্রা। সেখানে গিয়ে তিনি লক্ষ্য করেছেন এই পরগনায় বসবাসকারী মানুষেরা সাধারণত কৃষিজীবী। তাদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন কৃষি হলেও চাষ বাস করার জন্য তাদের কাছে লাঙ্গল হাল বা বলদ কিছুই নেই।

    যেহেতু সুসং পরগনা সাধারণত পাহাড়ের ঢালু দেশ তাই এখানে চাষবাসের তেমন কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। কিন্তু এই অনুর্বর জমিতে এখানকার জনজাতির চৈত্র মাসের দিনে গাছের নিচে পড়ে থাকা শুকনো পাতায় আগুন ধরিয়ে দেয়। বনের উপর বন ধরে সেই আগুন অনেকদিন ধরে চলতে থাকে যাকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন বিশাল আকার কোন চিতা জ্বলছে। লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় বনের এই আগুনকে রাবণের চিতার সঙ্গে তুলনা করেছেন।





    দাবানল জ্বলার সময় বনের বাঘ হরিণ শুয়োর অজগর প্রভৃতি জন্তু নিজে বাঁচার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে। তখন পাহাড়ের এই উপজাতিরা তাদের খাবার জন্য বিভিন্ন প্রাণী শিকার করে। আগুন জ্বলতে জ্বলতে কয়েকদিনের মধ্যে গোটা জঙ্গল সাফ হয়ে গেলে পাহাড়ের গা এবং উপত্যকায় কালো ছাইয়ের একটা পুরো আস্তরণ পড়ে যায়।


   সেই ছাই এর মধ্যে ফসলের বীজ ছড়াই এখানকার উপজাতিরা। সেই বীজ থেকে নতুন চারা গাছ জন্মায়। আর কয়েক দিনের মধ্যেই গারো পাহাড়ের সেই পড়া জমিতে তামাক ধান এবং অন্যান্য ফসলের সবুজ ক্ষেত গড়ে ওঠে। লেখক সুভাষ মুখপাধ্যায় তাই এই দাবানলের আগুন কে একদিকে সৃষ্টি অন্যদিকে বিনাশের দুই রূপ হিসাবে তুলে ধরেছেন। 





Comments

Popular posts from this blog

MP 2020 History MCQ suggestions, part 6th,

সপ্ত প্রবাহের নীতি। মাধ্যমিক কমিশনের সপ্ত প্রবাহের নীতি।

Four pillars of Education - শিক্ষার চারটি স্তম্ভ | Delors Commission 1997