জীবনী সাহিত্য কি ? চৈতন্য জীবনী গ্রন্থ চৈতন্যভাগবত সম্পর্কে আলোচনা করো - pdf

   বাংলা সাহিত্যে চৈতন্যদেব কে কেন্দ্র করে জীবনে সাহিত্যের সূচনা হয়েছিল। চৈতন্যদেব কে কেন্দ্র করে যে সকল জীবনী সাহিত্য রচিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চৈতন্য ভাগবত গ্রন্থ খানি। কবি বৃন্দাবন দাস চৈতন্যের জীবন কে কেন্দ্র করে এই চৈতন্য জীবনী গ্রন্থ কে রচনা করেছিলেন। এখানে আমরা গ্রন্থটির সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করলাম।

 

জীবনী সাহিত্য কি ? চৈতন্য জীবনী গ্রন্থ চৈতন্যভাগবত সম্পর্কে আলোচনা করো
Educostudy.in/চৈতন্যভাগবত 

জীবনী সাহিত্য

অনুপম রূপমাধুরী, অসাধারণ শাস্ত্রার্থজ্ঞান, অপ্রাকৃত প্রেম, অহৈতুকী করুণা, অপরিসীম ত্যাগ – অপরূপ এক লাবণ্যলতার লীলায়িত বন্ধনে বন্দী হয়ে বাংলার মাটিতে মূর্তি পরিগ্রহ করেছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব। সাধারণ মানুষ এই করুণাঘন জীবন দেখে নির্বিশেষ বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়েছে আর ভক্তের দল এই অলোকসামান্য জীবন কথাকে বাণীবন্দী করে অনাগত যুগের চির সম্পদ করে রেখে দিতে প্রয়াসী হয়েছে।




   যুগপরম্পরা বাহিত দেবমাহাত্ম্যের কল্পনার জলসাঘরে সম্পূর্ণ এক বাস্তব মানুষের কথা শোনবার জন্য এই প্রথম শ্রোতারা উৎসুক হয়ে উঠলেন। হতাশা-দৈন্যের নিরবধি অশ্রুবাষ্পে আকাশ যখন আকুলিত তখনই ধরার সে কান্নামোচনে মহাপুরুষদের আর্বিভাব।


প্রশ্নটির উত্তর পিডিএফ আকারে পেতে এখানে ক্লিক করুন 

 মধ্যযুগের বাংলায় সেরকমই এক উন্নতশির আলোকউজ্জ্বল প্রদীপ শ্রীচৈতন্যদেব। ঘরের ছেলের মধ্যে বিশ্বরূপের ছায়া দেখে বাঙালী তার ভাব সাধনায় দিকপরিবর্তন করল। শাপভ্রষ্ট দেব-দেবী নয়, গৃহাঙ্গনের পল্লীগ্রামের বহুদিনের জানাশোনা প্রিয় মানুষটাই দেবতা হয়ে গেল। ব্যক্তিকে অবলম্বন করে এই প্রথম সাহিত্য সৃষ্টি হল। 




চৈতন্যভাগবতঃ

বাঙালীর হিয়া অমিয় মথিয়া যে নিমাই কায়া ধারণ করেছিলেন তার ভাগবতী মহিমার প্রথম বর্ণনাকার চৈতন্যভাগবত রচয়িতা বৃন্দাবন দাস। কবি বর্ধমানের দেনুর গ্রামে বাস করতেন। কিন্তু তাঁর জন্মকাল নিয়েও অনেক সংশয় আছে। তবে ১৫১৯ খ্রীষ্টাব্দের আগে হওয়া সম্ভব নয় বলে অনেকে মনে করেন। বৃন্দাবন দাসের পিতৃপরিচয় অজ্ঞাত। গ্রন্থ মধ্যে শুধু মা নারায়ণীর নাম আছে। ‘চৈতন্যভাগবত’ গ্রন্থটির আদি নাম ছিল ‘চৈতন্যমঙ্গল’। কৃষ্ণদাস কবিরাজও একে ‘চৈতন্যমঙ্গল’ –ই বলেছেন। জনশ্রুতি আছে প্রায় সমকালে রচিত লোচনদাসের ‘চৈতন্যমঙ্গল’ দেখে মা নারায়ণীর পরামর্শে বৃন্দাবন দাস নিজের কাব্যের নাম বদলে ‘চৈতন্যভাগবত’ রাখেন। এর রচনাকাল নিয়েও সংশয় থাকলেও মোটামুটিভাবে ১৫৪৮ খ্রীষ্টাব্দকে এর রচনাকাল বলে মনে করা হয়।




চৈতন্যভাগবত তিন খণ্ডে পরিকল্পিত-

  • আদি খণ্ড ১৫ টি অধ্যায়ে সম্পূর্ণ
  • মধ্য খণ্ড ২৬টি অধ্যায়ে সম্পূর্ণ
  • অন্ত্য খণ্ড ১০টি অধ্যায়ে সম্পূর্ণ

এই মোট ৫১টি অধ্যায়ে গ্রন্থটি বিভক্ত। ছত্র সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার।


আদি খণ্ডে ১৫টি অধ্যায়ে গৌরাঙ্গের জন্ম থেকে আরম্ভ করে কৃষ্ণপ্রেমাবিষ্ট অবস্থায় গয়া থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত ঘটনা বিবৃত। মধ্যখণ্ডে ২৬টি অধ্যায়ে ঈশ্বর প্রেম মাতোয়ারা চৈতন্যের বিদ্যাদর্প ত্যাগ থেকে আরম্ভ করে নিমাই পণ্ডিতের চৈতন্যদেব হয়ে ওঠাই এই খণ্ডের বর্ণিতব্য বিষয়। অন্ত্যখণ্ডে ১০ টি অধ্যায়ে কেশব ভারতীর কাছে মহাপ্রভুর দীক্ষা গ্রহণ থেকে আরম্ভ মকরে নীলাচলে মহাপ্রভুর ভাবোন্মত্ত অবস্থা ফুটে উঠেছে। মহাপ্রভুর শেষ জীবনের কাহিনী এখানে অনুপস্থিত।




বৃন্দাবন দাস ভক্তের চোখ দিয়ে চৈতন্যকে দেখেছেন। ঐতিহাসিকের তথ্যনিষ্ঠতা তার ছিল না। তাঁর ত্রিপদীতে রচিত পদগুলি বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যেও উল্লেখযোগ্য। তাঁর গৌরচন্দ্রিকা বিষয়ক পদ মহাপ্রভুর দিব্য উন্মাদ চরিত্রের এক অপূর্ব বর্ণনা –


চলিতে নাহিকো পারে 	গোরাচাঁদ হেলে পড়ে
বলিতে না পারে আধোবোলা।
ভাবেতে অবশ হইয়া 	হরি হরি বলাইয়া
আচণ্ডালে ধরি দেয় কোল।।

অথচ এই চৈতন্য যে মানুষ, এই ধরণের সন্তান কবি তা ভোলেননি। কখনো বালক চৈতন্যের প্রাণ চঞ্চল দুরন্তপনা তাই অপূর্ব বর্ণনায় আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। আবার চৈতন্য সন্ন্যাস নিয়ে চলে যাবার সময় শচী মাতার করুণ বিলাপে অভাগিনী জননীর অশ্রুমথিত অন্তর উন্মোচিত হয়ে উঠেছে –


না যাইহ না যাইহ বাপ মায়েরে ছাড়িয়া।
পাপিনী আছয়ে সবে তোর মুখ চাহিয়া।।
তোমা দেখি সকল সন্তাপ পাসরিনু।
তুমি গেলে প্রাণ মুই সর্বথা ছাড়িমু।।


প্রশ্নটির উত্তর পিডিএফ আকারে পেতে এখানে ক্লিক করুন 

রঙ্গরসে করুণার উজ্জ্বল ধারায় আবার জীবনের সুখ-দুঃখ উত্তীর্ণ অতীন্দ্রিয় লোকের মহিমান্বিত ছায়ায় তাই কাব্যটি একাধারে মর্ত্যের জীবনরস আর স্বর্গের অমৃত বাণী বিতরণ করে চলেছে।




👉👉   আমরা এখানে চৈতন্যদেব কে কেন্দ্র করে রচিত হওয়া চৈতন্য ভাগবত জীবনী সাহিত্য গ্রন্থটির সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়াও বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য বিভিন্ন প্রশ্ন গুলি পেতে নিচে দেওয়া লিঙ্ক গুলি ফলো করতে পারেন এবং এখান থেকে ক্লিক করে বিভিন্ন উত্তর আপনি পেয়ে যাবেন।


Comments

Popular posts from this blog

সপ্ত প্রবাহের নীতি। মাধ্যমিক কমিশনের সপ্ত প্রবাহের নীতি।

কন্যাশ্রী প্রকল্প প্রজেক্ট | দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষা বিজ্ঞান প্রজেক্ট কন্যাশ্রী প্রকল্প | Kanyashri Prokolpo Project 2024

Four pillars of Education - শিক্ষার চারটি স্তম্ভ | Delors Commission 1997