মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ভাঁড়ু দত্ত (Bharu-Dutta) চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা - pdf

     মঙ্গলকাব্যের চন্ডীমঙ্গল কাব্য শাখায় যে সকল চরিত্র বর্গের নাম পাওয়া যায় তাদের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য চরিত্র  ভাঁড়ু দত্ত (Bharu-Dutta)। আমরা আগে বিভিন্ন মঙ্গল  চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা, করেছি আর এখানে, আমরা মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ভাঁড়ু দত্ত (Bharu-Dutta) চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করলাম -



style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-2511659517694820"
data-ad-slot="8200529540">

ভাঁড়ু দত্ত চরিত্র

 কায়স্থকুলতিলক ভাঁড়ু দত্ত মধ্যয়ুগের বাংলা সাহিতের এক দুর্লভ চরিত্র। পর্যবেক্ষণের দুখানি শক্ত-পোক্ত পা ছিল বলেই মুকুন্দরাম আমাদের চেনাচলতি জীবনের এই সহজপ্রাপ্ত মানুষটিকে তাঁর কাব্যে এমন রসমূর্তি দান করতে পেরেছিলেন। ভাঁড়ুর বৃত্তি কলম-পেশা।


  তাঁর সোনা-রূপা নেই, সৈন-সামন্ত নেই, থাকার মধ্যে আছে একটি ‘খরশান’ কলম। এই খরশান কলমের একটি আঁচড়ে ‘খিলভূমি’ লাল হয়ে যেত, কোণাকুনি মাপের বিচিত্র নিয়মে পনেরো কাঠায় বিঘা হিসাবে একই পরিমাণ শস্যের রাজস্ব অলৌকিকভাবে বহুগুণ হয়ে যেত।


ভাঁড়ু দত্ত (Bharu-Dutta) চরিত্র
Educostudy.in/Bharu-Dutta



style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-2511659517694820"
data-ad-slot="8200529540">

  দৈত্য নিধনের জন্য ইন্দ্রের বজ্র তৈরি হয়েছিল দধীচির হাড়ে, কিন্তু কোন উপাদানে প্রজাপীড়নের জন্য কায়স্থের লেখনী সৃষ্টি হয়েছিল তার উদ্দেশ্য কেউ না পেলেও মুকুন্দরামের মত ভুক্তভোগীরাই তার শক্তির প্রচণ্ডতা অনুভব করতে পারেন। মুরারী শীল ছিল চক্ষুলজ্জাহীন বণিক, আর ভাঁড়ু দুর্বুদ্ধিপূর্ণ কায়স্থতনয়।


কালকেতুর নগরপত্তনের পর অনেক মানুষের সঙ্গে বাসস্থান পাবার আশায় অগ্রণী আমলা হাঁড়ার দত্ত শ্রীমান ভাঁড়ুর আগমন। মুকুন্দরামের ব্যক্তিজীবনের বহু অভিজ্ঞতার আভরণে ভূষিত ভাঁড়ুর আগমন বর্ণনা সেযুগের মসীজীবী পরস্বাপহারক দুর্নীতিগ্রস্থ রাজকর্মচারীদেরই যেন আমাদের সামনে এনে হাজির করে।


“ভেট লয়্যা কাঁচকলা 	পশ্চাতে ভাঁড়ুর শালা
আগে ভাঁড়ু দত্তের পয়ান।
ভালে ফোঁটা মহাদম্ভ 	ছেঁড়া ধুতি কোঁচা লম্ব
শ্রবণে কলম খরশান।”


style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-2511659517694820"
data-ad-slot="8200529540">

সে এসেই কালকেতুর সঙ্গে খুড়া-ভাইপো সম্বন্ধ পাতিয়ে ফেলল। ভাঁড়ুর সামাজিক কৌলীন্য আছে, কিন্তু আর্থিক কৌলীন্য নেই। সেই অর্থহীনতা ভাঁড়ুর সামাজিক কৌলীন্যকে ব্যঙ্গ করে তার দারিদ্র্য হত প্রকট করে তোলে, তার প্রবঞ্চক চরিত্রের পশ্চাতের কারণটিও তত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই সে বলতে পারে –


“ঘোষ বসুর কন্যা 	দুই জায়া মোর ধন্যা
মিত্রে কৈলুঁ কন্যা সমর্পণ।
গঙ্গার দুকূল কাছে 	যতেক কায়স্থ আছে
মোর ঘরে করয়ে ভোজন।”

ভাঁড়ু রাজ্যের প্রধান পাত্র হয়ে, কালকেতুর প্রিয়ভাজন পূর্বতন প্রধান বুলান মন্ডলকে ম্লান করে দিয়ে কালকেতুকে পরামর্শ দেয় –


“দেওয়ান ঘোষের ব্যাটা 	বহিত আমার চিঠা
যারে বল বুলান মন্ডল
বুঝিয়া করহ কাজ 	শেষে নাহি পাও লাজ
ভালোমন্দ তোমার সকল।”


style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-2511659517694820"
data-ad-slot="8200529540">

ভাঁড়ুর অত্যাচারে হাটুরে লোকের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হবার উপক্রম হয় –


“পশরা লুটিয়া ভাঁড়ু পুরয়ে চুবড়ি
যত দ্রব্য লয় ভাঁড়ু নাহি দেয় কড়ি।
লণ্ডেভণ্ডে দেয় গালি বলে শালা মালা
আমি মহামণ্ডল আমার আগে তোলা।”


অদ্ভুত ভাঁড়ু নিজে দরিদ্র তবু অর্থাগমের জন্য প্রজাপীড়নকে সেও সমর্থন করেছে –


“যখন পাকিবে খন্দ 	পাতিবে বিষম দ্বন্দ্ব
দরিদ্রের ধনে দিব নাগা।”

কিন্তু এই কুমন্ত্রণার জন্য কালকেতু তার মণ্ডলী কেড়ে নিলে সে ক্রোধে, ক্ষোভে, বিদ্বেষে ফেটে পড়েছে। তাই তার অপমানিত আত্মভিমান আর বিনষ্ট সামাজিক মর্যাদা রাজা কালকেতুর অতীত ব্যাধ জীবনকে শরবিদ্ধ করতে চায় –


style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-2511659517694820"
data-ad-slot="8200529540">


“যেখানে আমার খুড়া ঘুচালো মণ্ডলী।
দেখিয়াছি খুড়া হে তোমার ঠাকুরালী।।
তিন গোটা শর ছিল একগোটা বাঁশ।
হাটে হাটে ফুল্লরা পশরা দিত মাস।।”


এখানেই ভাঁড়ুর রাগ। এমন কালকেতু দৈবপ্রসাদে আজ রাজা, আর দৈব দোষে কুলশীলে শ্রেষ্ঠ হয়েও ভাঁড়ু দুরবস্থার শিকার। তাই হিংস্রতাবশত এবার প্রতিজ্ঞা করে বসে –


“হরিদত্তের ব্যাটা হই জয় দত্তের নাতি।
হাটে লয়্যা বেচাইব বীরের ঘোড়া হাতি।।
তবে সুশাসিত হবে গুজরাট ধরা।
পুনরপি হাটে মাংস বেচিবে ফুল্লরা।।”


কালকেতুর বিনাশের চেষ্টায় ভাঁড়ু কলিঙ্গরাজের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছে কিন্তু সফল হয়নি। চণ্ডীর কৃপায় কালকেতু স্বরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হলে ভাঁড়ু নির্লজ্জভাবে কালকেতুর কাছে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করে –


style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-2511659517694820"
data-ad-slot="8200529540">


“তুমি খুড়া হইলে বন্দি 	অনুক্ষণ আমি কান্দি
বহু তোমার নাহি খায় ভাত
দেখিয়া তোমার মুখ 	পাশারিলুঁ সব দুখ
দশ দিক হৈল অবদাত।।”

কিন্তু এবারে কালকেতুকে ঠকানো যায়নি। কালকেতুর নির্দেশে অশ্বমূত্রে মাথা ভিজিয়ে, ধারহীন ক্ষুর দিয়ে মাথা কামিয়ে, দুইগালে চুনকালি দিয়ে শহর ঘোরানো হয়েছে ভাঁড়ুকে


 কিন্তু কালকেতুর মনে কষ্ট হল ভাঁড়ুর বিপদ দেখে। সে তাকে ‘পুনর্বার দিল ঘরবাড়ি’। এবার তাই জীবনের সর্বপ্রধান শত্রু কালকেতুরই দেওয়া প্রসাদ মাথায় তুলে ভাঁড়ুকে গুজরাটে দিন কাটাতে হয়েছে। ভাঁড়ু দত্তের জীবনে সেইটাই হল সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি


এই তো ভাঁড়ুর জীবনচরিত। ভাঁড়ুদত্ত একটা শয়তান। শয়তান আছে বলেই তো সংসার সুখে-দুঃখে জমে উঠেছে। শয়তান না থাকলে আদি দম্পতি আদম ও ইভ এখনো নন্দন বনে বসে বসে পরিপূর্ণ নৈষ্কর্ম্য উপভোগ করত। ভাঁড়ুর শয়তানীর আড়ালে কিন্তু আছে একটা দুঃখ ও অভাবের নিত্য অসহায় ক্রন্দন।


style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-2511659517694820"
data-ad-slot="8200529540">


 তারও স্বপ্ন ছিল বিত্তে প্রতিপত্তিতে বড় হওয়ার। কেবল দেবতার অলৌকিকত্বের মায়াম ছায়াটুকু পায়নি বলে সে কুলশীল শ্রেষ্ঠ হয়েও প্রবঞ্চনা আর ধূর্ততার মূর্তিরূপে জন্মেছে।


দুর্ভাগ্য ভাঁড়ুর, তার প্রবঞ্চনাটুকুই সংসারে পরিচিত হয়ে গেল, প্রবঞ্চনার আড়ালে বেদনার্ত, অভাবপীড়িত মানুষের উঁচুতে ওঠবার অনলস চেষ্টা ও স্বপ্ন দেখার ইতিহাস কেউ খুঁজে দেখল না।


 বর্তমানেও বাংলাদেশে ভাঁড়ু অত্যন্ত সাধারণ জীব। তাই ভাঁড়ু অত্যন্ত ‘মডার্ণ’, তার মাসতুতো ভাই বলা চলে ‘আলালের ঘরের দুলাল’-এর ঠকচাচাকে। এখানেই সৃষ্টি হিসাবে ভাঁড়ু ও স্রষ্টা হিসাবে মুকুন্দরাম অবিস্মরণীয়।



style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-2511659517694820"
data-ad-slot="8200529540">

👉👉   বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য মঙ্গলকাব্য চন্ডীমঙ্গল এবং এই কাব্যে যেসকল চরিত্রগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বা গুরুত্বপূর্ণ তাদের মধ্যে ভাড়ুদত্তের চরিত্র সম্পর্কে আমরা এখানে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।   এছাড়াও বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তর গুলি পাওয়ার জন্য উপরে দেওয়া লিংকটি তে ক্লিক করতে পারেন।

Comments

Popular posts from this blog

MP 2020 History MCQ suggestions, part 6th,

সপ্ত প্রবাহের নীতি। মাধ্যমিক কমিশনের সপ্ত প্রবাহের নীতি।

Four pillars of Education - শিক্ষার চারটি স্তম্ভ | Delors Commission 1997