ভ্রমণ সাহিত্য কি ? বাংলা ভ্রমণ সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো।
চিরকাল একটা কথা প্রচলিত যে বাঙালিরা নাকি ভ্রমণপিপাসু অর্থাৎ বাঙালিরা ঘুরতে ভালোবাসি। সমাজ - মানষে যা প্রতিফলিত হয় তাই উঠে আসে সাহিত্যে, কারণ "সাহিত্য সমাজের দর্পণ"। এই কারণে এক সময় ভ্রমণ পিপাসু মানুষের হাত ধরে উঠে এলো নতুন এক সাহিত্যধারা যার নাম হল ভ্রমণ সাহিত্য। এখানে ভ্রমণ সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ভ্রমণ সাহিত্য কি ?
ভ্রমণপিপাসু মানুষের প্রকৃতির হৃদয় পিপাসু দৃষ্টিভঙ্গি যখন সাহিত্যে উঠে আসে তখন তা হয়ে যায় ভ্রমণ সাহিত্য। অর্থাৎ বলা যেতে পারে মানুষ ভ্রমণ করতে গিয়ে যেভাবে প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করে সেই সকল স্থানকে উপলব্ধি করে তাই যখন সাহিত্যে উঠে আসে তখন তা ভ্রমণ সাহিত্য।
ভ্রমণ সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা
বাংলা সাহিত্যের একটি ছোট্ট তম বিভাজন হলো ভ্রমণ সাহিত্য। এটি নবীনতম সংযোজন হলেও এর কলেবর অনেক বড়, তার থেকে বড় ভ্রমণ সাহিত্যের ইতিহাস। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস আলোচনা করলেই আমরা দেখতে পাই মেগাস্থিনিস, Hu-Un-Si-Ki-An , প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ একসময় ভারতের প্রকৃতি বিভিন্ন রাজধানী ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভারত ভ্রমনে এসেছিলেন। আর তাদের সেই অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছিলেন নিজের মনের মত করে নিজের গ্রন্থে। হয়তো সেই থেকেই এই ভ্রমণ সাহিত্যের শুরু। অনুমান করা যায় বাংলায় ভ্রমণ সাহিত্যের শুরু চৈতন্য পরবর্তী সময়ে চৈতন্যদেবের ভ্রমণ যাত্রা কে কেন্দ্র করে।
বাংলা সাহিত্যে সেই মধ্যযুগে অল্পবিস্তর বর্ণিত ভ্রমণ যাত্রা ছিল পদ্য ভাষায় লেখা। যেমন নরহরি চক্রবর্তী তাঁর নবদ্বীপ পরিক্রমা এবং গোবিন্দদাস তার কড়চা তে যেভাবে উল্লেখ করেছেন পদ্য ছাড়া আর কিছু নয়। আবার রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র অন্নদামঙ্গল এ ভ্রমণ কাহিনী বর্ণিত আছে কিন্তু তা বিশুদ্ধ ভ্রমণ সাহিত্য হয়ে উঠতে পারেনি তবে বলা যায় সেগুলি আজকের ভ্রমণ সাহিত্যের পূর্বসূরী ।
আধুনিক যুগে বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যের সূচনা মোটামুটিভাবে জয় নারায়ন ঘোষালের কাশি পরিক্রমা গ্রন্থের মধ্য দিয়ে। এছাড়া যদুনাথ সর্বাধিকারীর তীর্থ ভ্রমণ, রমেশচন্দ্র দত্তের ইউরোপ পরিভ্রমণ ইত্যাদি গ্রন্থ গুলি বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যের প্রথম দিকের রচনা।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ সাহিত্য হল - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হিমালয় ভ্রমণ, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পালামৌ দর্শন, দুর্গাচরণ রায়ের কল্পকাহিনীর মাধ্যমে রচিত দেবগণের মর্ত্যে আগমন, যোগেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় পয়সার ডায়রি এর উল্লেখযোগ্য।
ভ্রমণ সাহিত্য |
বাংলা ভ্রমণ সাহিত্য যার হাতে প্রাণবন্ত ও নব উচ্ছ্বাসে যৌবন লাভ করেছিল তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার লেখা বিভিন্ন ভ্রমণকাহিনী পড়লে বাঙালির ভ্রমণপিপাসু হৃদয় ভ্রমণের আকাঙ্ক্ষা মেটাতে পারে। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ সাহিত্য গুলি হল - জাভা-যাত্রীর পত্র, রাশিয়ার চিঠি, য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র ইত্যাদি। তবে রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্রের পত্রগুলি একান্তভাবে পত্রসাহিত্য হলেও তাতে লেগে আছে ভ্রমণ সাহিত্যের এক অপার ছন্দ।
রবীন্দ্র পরবর্তী সময়ে প্রবোধকুমার সান্যাল এর দেবাত্ম হিমালয়, মহাপ্রস্থানের পথে, সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে-বিদেশে, অন্নদাশঙ্কর রায়ের পথে প্রবাসে, জলধর সেন এর হিমালয়, রমানাথ বিশ্বাসের লাল চিন, অবধূত এর মরুতীর্থ হিংলাজ, মনোজ বসুর চীন দেখে এলাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ও বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
এছাড়া বাংলা সাহিত্যের রূপ রীতি অনন্য প্রশ্নগুলি
- উপন্যাস কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য লেখ
- রোমান্স কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য লেখ
- ঐতিহাসিক উপন্যাস কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
- সামাজিক উপন্যাস কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য লেখ।
- রাজনৈতিক উপন্যাস কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য লেখ।
- আঞ্চলিক উপন্যাস কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য লেখ।
- মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য লেখ।
- ছোটগল্প কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
Comments
Post a Comment