ভারতবর্ষে অঙ্গ রাজ্যের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো | অঙ্গ রাজ্যের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী

    দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে ভারতবর্ষে অঙ্গ রাজ্যের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো, এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।




ভারতবর্ষে কোন অঙ্গ রাজ্যের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।

     ভারতবর্ষের অখন্ড বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট এবং ভারতবর্ষের অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হলো হাইকোর্ট। রাজ্য বিচার ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টে ব্যাপক প্রভাব ও প্রতিপত্তি অধিকারী। এই কোর্টের নথিপত্রই রাজ্যের অন্যান্য আদালতের কাছে প্রামাণ্য দলিল স্বরূপ। এই কারণে রাজ্য বিচারব্যবস্থায় হাইকোর্ট অসামান্য তাৎপর্যের অধিকারী।




অঙ্গ রাজ্যের হাইকোর্টের গঠন

     ভারতীয় সংবিধানে 216 নং ধারা অনুযায়ী একজন প্রধান বিচারপতি এবং সেই সংখ্যা অন্যান্য বিচারপতিকে নিয়ে গড়ে ওঠে হাইকোর্ট যে সংখ্যক বিচারপতিকে নিয়োগ করার প্রয়োজন বলে ভারতের রাষ্ট্রপতি মনে করেন। বিচারপতিগণ অবশ্য রাজ্যপালের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। তারা তাদের 62 বছর বয়স পর্যন্ত পদে বহাল থাকেন। অবশ্য এর আগেও তারা নিজেরাই পদত্যাগ করতে পারেন অথবা অকর্মণ্যতা ও দুর্নীতির অভিযোগে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি তাদের পদচ্যুত করতে পারেন।

 



অঙ্গ রাজ্যের হাইকোর্টের কার্যাবলী  

    হাই কোর্টের কার্যাবলী কয়েকটি এলাকায় বিভক্ত,যথা—

মূল এলাকা :-  রাজস্ব সংক্রান্ত সব মামলায় হাইকোর্টের মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত। 1976 সালের 42 তম সংবিধান সংশোধনী আইন হাইকোর্টের এই এলাকার ক্ষমতাকে বাতিল করে দিয়েছিল। 1978 সালের 44 তম সংবিধান সংশোধনী আইন হাইকোর্টের এই এলাকার ক্ষমতাকে আবার ফিরিয়ে দিয়েছে।




আপিল এলাকা :-   হাইকোর্ট দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে রাজস্বের সর্বোচ্চ আপিল আদালত স্বরূপ। কোন অর্ধস্থান এলাকার তথা জেলা জর্জ ও সহকারী জর্জের রায়ের বিরুদ্ধে,দেওয়ানী মামলার রায়ের বিরুদ্ধে, দেওয়ানী মামলার আপিল হাইকোর্টে করা যায়। ফোজদারি মামলার ক্ষেত্রে দায়রা জর্জ ও অতিরিক্ত দায়রা জর্জ কর্তৃক প্রদত্ত 7 বছরের অধিক কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়।




লেখ জারি করার এলাকা :-   ভারতীয় সংবিধানের 226 নং ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে নিজস্ব এক্তিয়ারভুক্ত ভৌগলিক এলাকার অন্তর্ভুক্ত যেকোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের প্রতি আদেশ,নির্দেশ তথা লেখ জারি করতে পারে। হাইকোর্ট কর্তৃক জারি করা এই লেখ গুলি হল,যথা— (i)বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ,(ii)পরমাদেশ,(iii) প্রতিশোধ,(iv)অধিকার পৃচ্ছা,(v) উৎপ্রেষণ

অঙ্গ রাজ্যের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী
হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী


    প্রসঙ্গক্রমে আমাদের উল্লেখ করা প্রয়োজন যে— মৌলিক অধিকার রক্ষা ছাড়াও আইনগত অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট এই সমস্ত নির্দেশ বা লেখ জারি করতে পারে।




তত্ত্বাবধায়ক এলাকা :-   হাইকোর্ট সামরিক আদালত ও ট্রাইবোনাল ছাড়া রাজ্যের অন্য কোনো আদালত ও ট্রাইবোনালের কাজকর্ম তত্ত্বাবধান করতে পারে। তাদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র পেশ করার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিতে পারে এবং হিসাবপত্র, দলিল-দস্তাবেজকে উপযুক্তভাবে সংরক্ষণের নির্দেশ দিতে পারে হাইকোর্ট। এদিক থেকে হাইকোর্ট রাজ্যের অন্যান্য আদালতের অভিভাবক স্বরূপ।




আইন বৈধতা বিচার :-   মূল ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইনসভার আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করতে পারে। কিন্তু 1976 সালের 42 তম সংবিধান সংশোধনী আইন অনুযায়ী হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় আইনের বৈধতা বিচার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হয়। এই আইন অনুযায়ী হাইকোর্ট শুধুমাত্র রাজ্য আইনের বৈধতা বিচার করতে পারবে, তবে সেক্ষেত্রে দুজন বিচারপতির উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় এবং কোন রাজ্য আইন অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ বিচারপতির উপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়।




মামলা নিজহস্তে গ্রহণ :-   হাইকোর্ট উৎপ্রেষণ লেখার সাহায্যে নিম্ন আদালতের মামলা নিজের হাতে তুলে এনে তা নিজেই বিচার করতে পারে। তবে এই ধরনের মামলার সঙ্গে সংবিধানের প্রশ্ন অবশ্যই জড়িয়ে থাকা চাই।




নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা :-   হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। জেলা জর্জ ও নিম্ন আদালতের জর্জদের নিয়োগ,পদোন্নতি ও বদলির বিষয়ে হাইকোর্ট রাজ্যপালকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। তাছাড়া হাইকোর্ট রাজ্যের অন্যান্য আদালতের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিচার করতে পারে। শুধু তাই নয় জেলা আদালত সহ সর্ব নিম্ন আদালতের কর্মচারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে হাইকোর্ট সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে।




অন্যান্য ক্ষমতা :-   হাইকোর্ট আরো কিছু ক্ষমতা ভোগ করে থাকে,যথা —

 (i) হাইকোর্ট অভিলেখ আদালত হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই তার নথিপত্র নিম্ন আদালত গুলির কাছে প্রামাণ্য দলিল স্বরূপ।

 (ii) আদালত অবমাননার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট নিজেই অবমাননাকারীকে শাস্তি দিতে পারে।

 (iii) নিজের বিচারকার্যের সুবিধার জন্য হাইকোর্ট প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী প্রণয়ন করতে পারে।

    ভারতবর্ষের প্রতিটি হাইকোর্ট এই সমস্ত ক্ষমতা ভোগ করে থাকে।




মন্তব্য :-   সুতরাং আমরা বলতে পারি যে রাজ্য বিচার ব্যবস্থায় হাইকোর্ট অন্যান্য সাধারণ ক্ষমতার অধিকারী হলেও সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্ট যে অতি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে তার পেক্ষাপটে হাইকোর্ট প্রভূত ক্ষমতাও অসামান্য গুরুত্বের অধিকারী হয়ে উঠেছে। বস্তুতপক্ষে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রিত্ব কালে তার বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার যে উচ্চ দৃষ্টান্ত ও মানসিক বলিষ্ঠতা এলাহাবাদ হাইকোর্ট তুলে ধরেছে তা হাইকোর্টের দায়িত্বশীল,নির্ভীক, নিরপেক্ষ ও একান্ত জনগণতান্ত্রিক ভূমিকাকে সুস্পষ্ট করে দিয়েছে।




Political Science Question & Answere

Comments

Popular posts from this blog

চর্যাপদ প্রশ্ন উত্তর - বাংলা সাজেশন - বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদ - pdf

Learning, শিখন। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রথম পার্ট।

রবীন্দ্রনাথের কর্তার ভূত গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন