ভারতের সুপ্রিম কোর্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।

    দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে যে সকল প্রশ্ন গুলি পরীক্ষাতে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই সকল প্রশ্ন গুলির উত্তর এখানে যথা যথ ভাবে আলোচনা করা হলো। এখানে আমরা পর পর উত্তর গুলিকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো, এই প্রশ্নটির উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।




ভারতের সুপ্রিম কোর্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।

     ভারতবর্ষের অখন্ড বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই কোর্ট ভারতীয় সংবিধানের ব্যাখ্যা দান করে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত হিসেবে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা বজায় রেখে থাকে। এদিক থেকে ভারতবর্ষের বিচারব্যবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট অসামান্য গুরুত্বের অধিকারী।




ভারতের সুপ্রিম কোর্টের গঠন 

     মূল ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট 1 জন প্রধান বিচারপতিসহ মোট 8 জন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত হয়। তবে 1984 সালে সংসদীয় আইন অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট 1 জন প্রধান বিচারপতিসহ মোট 26 জন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত হয়। কিন্তু বর্তমানে 1 জন প্রধান বিচারপতিসহ মোট 34 জন বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হয়। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি গনকে নিয়োগ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। তারা তাদের 65 বছর বয়স পর্যন্ত পদে বহাল থাকেন। তবে তারা ইতিমধ্যে পদত্যাগ করতে পারেন অথবা অসৎ প্রমাণিত অসমাপ্ত ও দুর্নীতির অভিযোগে সংসদীয় Impeachment (মহা বিচার) পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি তাদের পদচ্যুত করতে পারেন।




ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী 

      ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট কয়েকটি এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে থাকে, যথা —

মূল এলাকা :-  সুপ্রিম কোর্টের বিচার কাজের মূল এলাকা সেই সব মামলাকে নিয়ে গড়ে ওঠে যে মামলাগুলো সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয়। এই ধরনের মামলা গুলি হল,যথা —



 (A) কেন্দ্রীয় সরকার বনাম রাজ্য সরকারের বিরোধের মামলা।

 (B) কেন্দ্রীয় সরকার ও এক বা একাধিক রাজ্য সরকারের বিরোধের মামলা ।

 (C) রাজ্য সরকারের সাথে এক বা একাধিক রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা।

  এই তিন ধরনের মামলার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট মূল এলাকার বিচার কার্য করতে পারে।


আপিল এলাকা :-   ভারতের অন্তর্গত যেকোন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট আপিল মামলার বিচার করে থাকে। সাধারণত এই আপিল মামলা গুলি 3 ধরনের হয়,যথা —



(A) সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আপিল :-   ফৌজদারি, দেওয়ানী অথবা অন্য কোনো মামলায় হাইকোর্ট যদি এই মর্মে প্রশংসা পত্র দেয় যে মামলাটির সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত বিষয় জড়িয়ে আছে তাহলে সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলার ব্যাপারে আপিল করা যাবে।

(B) দেওয়ানী আপীল :-  1972 সালে 30 তম সংবিধান সংশোধনী আইন অনুসারে কোন দেওয়ানী মামলায় প্রদত্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে তখন আপিল করা যাবে যখন হাইকোর্ট এই মর্মে প্রশংসা পত্র দেয় যে মামলাটির সঙ্গে আইনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িয়ে আছে।



(C) ফৌজদারি আপিল :-  ফৌজদারি মামলায় প্রদত্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কয়েকটি ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায় যথা —

 ১) যে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট কোন নিম্ন আদালতের বিচারে মুক্তিপ্রাপ্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়।

 ২) যে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট কোন মামলাকে নিম্ন আদালত থেকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের গঠন ও কার্যাবলী
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের গঠন ও কার্যাবলী


 ৩) যে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট এই মর্মে প্রশংসা পত্র দেয় যে সংশ্লিষ্ট ফৌজদারি মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে আপিল যোগ্য।



  এই তিন ধরনের আপিল ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ অনুমতিতে আপিল নামক আর এক প্রকারের মামলার বিচার করে থাকে।

(D) বিশেষ অনুমতিতে আপেল :-   সুপ্রিম কোর্ট নিজের বিবেচনা অনুযায়ী সামরিক আদালত ছাড়া ভারতের অন্য যে কোন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তার নিজের কাজটি পুনর বিচারের জন্য আপিল করার বিশেষ অনুমতি দিতে পারে,একেই বিশেষ অনুমোদিত আপেল বলে।




পরামর্শদান এলাকা :-   ভারতের রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে ভারতীয় সংবিধানের কোন আইন সম্পর্কে বিতর্ক উঠেছে বা উঠতে পারে তাহলে তিনি সেই বিষয়টি সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ চাইতে পারেন এবং সুপ্রিম কোর্টও তখন শুনানির পরতার পরামর্শ রাষ্ট্রপতিকে জানাতে পারেন।


লেখ জারি করার এলাকা :-   ভারতীয় জনগণের মৌলিক অধিকার গুলিকে রক্ষা করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় সংবিধানের 32 নং ধারা অনুযায়ী 5 টি লেখ জারি করতে পারে। যথ—



(A) বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ :- এটি হলো গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত করার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষের কর্তৃক সুপ্রিম কোর্টের আদেশ।

(B) পরমাদেশ :-  এটি হলো ব্যক্তি সরকার বা অন্য কোন সংস্থাকে নিজের আইন নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে বলার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ।

(C) প্রতিশেধ বা নিষেধাজ্ঞা :-  এটি হলো নিম্ন আদালতকে তার এলাকার বাইরে গিয়ে কাজ করতে নিষেধ করার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ।



(D) অধিকার পিচ্ছ :-   এটি হলো উপযুক্ত হীন বা  যোগ্যতাহীন ব্যক্তি কোন পদের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলে বা ভোগ করার দাবি করলে তার একরকম ভোগ বা দাবির যথার্থ জিজ্ঞাসা করার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ।

(E) উৎপ্রেষণ :-   এটি হলো নিম্ন আদালতে কোন মামলার সুবিচার হওয়া সম্ভব নয় মনে করলে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক সেই মামলাটিকে তুলে নেওয়ার আদেশ।



  এই পাঁচটি লেখ ও আদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট নাগরিকদের লঙ্ঘিত মৌলিক অধিকারকে সুরক্ষিত করে থাকে।


অন্যান্য ক্ষমতা :-   সুপ্রিম কোর্ট আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে থাকে এই কোর্ট বিচার বিভাগীয় সমীক্ষায় ক্ষমতার মাধ্যমে আইনসভার আইন ও সরকারের শাসন বিভাগীয় আদেশের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করে থাকে। তাছাড়া এই কোর্ট তার নিজের দেওয়া আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে পারে। ভারতের অন্তর্গত সমস্ত আদালতের জন্য এই কোর্ট একইরকম আইন বিধি প্রণয়ন করতে পারে। তাছাড়া এই কোর্ট প্রামাণ্য দলিল স্বরূপ অভিলেখ আদালত এর ভূমিকা পালন করে থাকে।




মন্তব্য :-   সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত তেমনি অন্যদিকে হলো সর্বোচ্চ আপিল আদালত। এই কোর্টই জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষাকর্তা, সংবিধানের ব্যাখ্যা কর্তা এবং অভিভাবক। এই কারণে ভারতীয় বিচারব্যবস্থা সুপ্রিম কোর্ট অসামান্য তাৎপর্য ও সীমাহীন গুরুত্বের অধিকারী।




Political Science Question & Answere

Comments

  1. ভারতীয় জনপরিষদের লক্ষ্যগুলি আলোচনা করো?

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

MP 2020 History MCQ suggestions, part 6th,

সপ্ত প্রবাহের নীতি। মাধ্যমিক কমিশনের সপ্ত প্রবাহের নীতি।

Four pillars of Education - শিক্ষার চারটি স্তম্ভ | Delors Commission 1997