নৌ-বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা করো | Indian Navy mutiny

    দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয় থেকে যেসকল প্রশ্নগুলি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এখানে সেই সকল প্রশ্ন নিয়ে নোট আকারে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণীর অন্যান্য বিষয়ের সকল নোট এখানে আলোচনা করা হয়। 

   ইতিহাস বিষয় থেকে পরপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আলোচনা করা হলো যেখানে এই পোস্টটি তে নৌ-বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা করো , প্রশ্নের বিষয়টিকে এখানে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হলো।

নৌ-বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা
নৌ-বিদ্রোহ

নৌ-বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা করো।


ভূমিকা :- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা হলো নৌ-বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের প্রবল আঘাত ব্রিটিশ শক্তিকে ভারতবর্ষ ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল। তাই 1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহকে যদি ভারতের স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ বলে মনে করা হয়, তাহলে 1946 সালের বিদ্রোহকে ভারতের স্বাধীনতার শেষ যুদ্ধ বলে আমরা চিহ্নিত করতে পারি।




নৌ বিদ্রোহের উৎস

1946 সালের 18 ফেব্রুয়ারি তারিখে নৌ-বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। এই বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন নৌবাহিনীর জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয় এই সংগৃহীত সৈন্যগণ আজাধীন ফৌজ এর বিচারের নামে প্রহসনের ঘটনার তারা দারুন ভাবে প্রবাবিত হয়। নৌ-নাবিক ফণীভূষণের মতে ভারতের সমাজতান্ত্রিক দলের সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনীর ওপর গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং নৌ সেনাদের বিদ্রোহের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। এমত অবস্থায় ‘রয়েল ইন্ডিয়ান নেভির তলোয়ার’ নামক জাহাজ নিম্নমানের খাদ্য ও জাতীয় অবমাননার প্রতিবাদে নৌ-সেনারা 1946 সালের 18 ফেব্রুয়ারি তারিখে ধর্মঘট শুরু করে।




নৌ বিদ্রোহের সূচনা

 নৌবাহিনীর এই ধর্মঘটে 15 হাজার শ্রমিক যোগ দেয়। পরের দিন 19 শে ফেব্রুয়ারি তারিখে নৌ-বিদ্রোহীরা ব্রিটিশ পতাকা নামিয়ে কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও কমিউনিস্টদের পতাকা উত্তোলন করে। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল ‘ভারত মাতা জিন্দাবাদ’,‘ইংরেজ ভারতছাড়ো’,‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’ প্রভৃতি স্লোগান। নৌ বিদ্রোহীরা এস.এন.রয় -কে সভাপতি এবং মানসিংহকে সহ-সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন। বোম্বাইয়ের সমস্ত রণতরী এবং বারোটি জাহাজের সমস্ত নাবিক নৌ-বিদ্রোহে যোগ দেয়।




নৌ বিদ্রোহের গতি প্রকৃতি

 ধীরে ধীরে নৌবিদ্রোহ বোম্বাই থেকে মাদ্রাস ও কলকাতা বন্দরের ছড়িয়ে পড়ে। বোম্বাই বন্দর এর সমস্ত জাহাজে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ব্রিটিশ সরকার বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য পদাতিক বাহিনী প্রেরণ করে এর ফলে পদাতিক বাহিনী ও নৌবাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। সাত দিনব্যাপী এই যুদ্ধের পর ভারতীয় সেনারা জয়লাভ করে। নৌ সেনাদের জয়লাভে ব্রিটিশ সরকার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ অ্যাডমিরাল গডফ্রে বোমারু বিমানের চেপে ঘটনাস্থলে এসে বিদ্রোহীদের ধ্বংস করার হুঁশিয়ারি দেন কিন্তু নৌ-সেনারা তাতে ভয় না পেয়ে তাদের আন্দোলনকে বরং আরও জোরদার করতে উদ্যোগী হয়।



    নৌ বিদ্রোহের তাদের বিদ্রোহকে সমর্থন করার জন্য ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানান। তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে বোম্বাইয়ের কমিউনিস্ট পার্টি ধর্মঘটের ডাক দেয়। এই ধর্মঘটে 23 হাজার শ্রমিক অংশগ্রহণ করে,পুলিশের সাথে জনতার সংঘর্ষ বাধে। এ সময় বিদ্রোহীরা দাবি করেন যে ভারতের আজাধীন ফৌজ এর বিচার স্থগিত রাখতে হবে এবং অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তারা তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবিও তুলে ধরে।

নৌ বিদ্রোহের পরিণতি

 নৌ বিদ্রোহ ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠতে থাকলে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল  নৌবিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের কথা বলেন এবং এই আশ্বাস দেন যে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে বলপ্রয়োগ মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে জাতীয় কংগ্রেস তাদের স্বার্থ রক্ষার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। অন্যদিকে গান্ধীজী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করে বলেন যে নৌবাহিনী চাকরি না পোষালে তারা যেন চাকরী ছেড়ে দেয়। এই বক্তব্যে নৌবাহিনী অত্যন্ত ব্যথিত হয় এবং অবশেষে বল্লভ ভাই প্যাটেলের কথায় আশ্বস্ত হয়ে তারা আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বলেন যে ‘আমরা ভারতবাসীর কাছে আত্মসমর্পণ করছে ব্রিটিশদের কাছে নয়।



     নো বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করলে ব্রিটিশদের যুদ্ধজাহাজ নৌবাহিনীর জাহাজ গুলিকে ঘিরে ফেলে নৌসেনাদের গ্রেফতার করে এবং তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালাতে থাকে। নৌবাহিনীদের নেতা এস.এস খানের পায়ে পাথর বেঁধে তাকে আরব সাগরে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। এর ফলে নৌ বিদ্রোহের করুন পরিসমাপ্তি ঘটে।

উপসংহার :- সুতরাং আমরা বলতে পারি যে নৌবিদ্রোহ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের মনে মৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে দিয়েছিল,ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিকে কম্পিত করেছিল এবং ব্রিটিশ শক্তিকে ভারত রাজ্য ছেড়ে যেতে মানসিকভাবে বাধ্য করে তুলেছিল। তাই শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দেওয়ার পূর্ব ঘোষিত সময় 1948 সালের জুন মাসের পরিবর্তে 1947 সালের 15 আগস্ট তারিখে কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়। এই ঘটনা থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের ইতিহাসে নৌ বিদ্রোহের সুমহান তাৎপর্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের অন্য সকল প্রশ্ন ও উত্তর : 

Comments

Popular posts from this blog

MP 2020 History MCQ suggestions, part 6th,

সপ্ত প্রবাহের নীতি। মাধ্যমিক কমিশনের সপ্ত প্রবাহের নীতি।

Four pillars of Education - শিক্ষার চারটি স্তম্ভ | Delors Commission 1997