জীবনদেবতা কবিতায় জীবনদেবতার স্বরূপ আলোচনা করো | জীবনদেবতা কবিতার মূল ভাব

   কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের সমস্ত কর্ম কাণ্ডের কান্ডারী নিজ হস্তে কাব্যের মহিমায় এক পরিপূর্ণতা দান করেছিলেন যা তার সাহিত্যে নারী কখনো পুরুষ কখনো প্রেমিক, কখনো বা মহীয়সী দেবী। আর এই অলৌকিক এক অদৃশ্য চরিত্র যেনো কবির সকল কাব্য শক্তির আধার যাকে তিনি জীবনদেবতা কবিতায় আস্বাদন করতে চেয়েছেন বিচিত্র ভাবে।




জীবনদেবতা তত্ব

   "যিনি আমার সমস্ত ভালো-মন্দ আমার সমস্ত অনুকূল প্রতিকূল উপকরণ লইয়া আমার জীবনকে রচনা করিয়া লইয়াছেন তাহাকে কাব্যে আমি জীবনদেবতা নাম দিয়াছি।"


         —---------- জীবনদেবতা সম্পর্কে একথা বলেছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আত্মপরিচয় গ্রন্থে। এই জীবন দেবতাই কবিকে চালিত করেছেন অভিজ্ঞতার ঘাটে ঘাটে বিভিন্ন রূপ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে। জীবনদেবতা - ই কবির কাব্য ও ব্যক্তিজীবনের এক নিয়ন্ত্রিশক্তি। অর্থাৎ জীবনদেবতা তত্ত্বই কবির জীবনতত্ত্ব। কবি অন্যত্র বলেছেন - 


  • মেঘনাদ বধ কাব্যে চতুর্থ স্বর্গের পরিকল্পনা বা প্রয়োজনীয়তা লেখ।


  •     "জীবনদেবতা বিশ্বদেবতা থেকে স্বতন্ত্র সত্তা নয়।"

            —--- বোঝা যায় বিশ্বদেবতাই জীবন দেবতার রূপে কবির চির সঙ্গী হয়ে অবার্ধক্য লীলা করে পরমাত্মার সহিত কবি আত্মার নিত্য মিলনের সম্বন্ধ স্থাপিত হয়েছে। 

    জীবনদেবতা তত্ব


         'চিত্রা' কাব্যে জীবনদেবতা সম্পর্কে কবির বক্তব্য সুস্পষ্ট হয়েছে। এই জীবনদেবতা অন্তর্যামী কবিতায় জগতের মাঝে বিচিত্ররূপী নিয়ে ও অন্তর মাঝে অন্তররুপিনী। সাধারণত তিনি নারীরূপী কিন্তু জীবনদেবতা কবিতায় তিনি পুরুষরূপে কল্পিত হয়েছেন। কবির ব্যক্তিজীবনের মধ্যে জীবনদেবতা'র যে লীলা চলেছে সেই লীলাই ব্যক্তি জীবনের সংকীর্ণতা, স্খলন, পতন ত্রুটি দুর করে কিভাবে তাকে পরিপূর্ণ বিশ্বজীবনের প্রতীক করে তুলেছেন তারই গোপন ইতিহাস কবির নানাবিধ প্রশ্নে ব্যক্ত হয়েছে এই কবিতায়। এখানে জীবনদেবতা যন্ত্রী আর কবি যন্ত্র, তারই ইচ্ছানুসারে কবি গড়ে তোলেন নিত্য নতুন সৃষ্টি সম্ভার - 

           "গলায়ে গলায়ে বাসনার সোনা

             প্রতিদিন আমি করেছি রচনা ''''''।"



           — এখানে কবির প্রেম 'নিকষিত হেম' - এ পরিনত, আর হৃদয়ের কামনা বাসনার খাদকে পুড়িয়ে এ প্রেম খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। 

    • মোটিভেশনাল গল্প পড়ুন

         জীবনদেবতা কেনো কবিকে আপনার লীলাক্ষেত্র রূপে নির্বাচন করেছেন, তার সকল নর্ম ও কর্ম জীবনদেবতাকে তৃপ্তি দিতে পেরেছে কিনা! - ইত্যাকার নানাবিধ প্রশ্ন কবির মনে জেগেছে। এরই পরে মানব সুলভ দুর্বলতা নিয়ে কবির বৈষ্ণবচিত বিনয় প্রকাশ -

          "কি দেখিছ, বধূ মরম - মাঝারে রাখিয়া নয়ন দুটি / করেছো কি ক্ষমা যতেক আমার স্খলন, পতন, ত্রুটি ?"




         রবীন্দ্রনাথ বিমূর্ত জীবনদেবতার মধ্য দিয়ে আত্মদীপ্ত হওয়ার এক দুর্বার সাধনায় মগ্ন। এক্ষেত্রে কবির ভূমিকা নারীরুপে। জীবনদেবতার সঙ্গে তার জন্ম - জন্মান্তরের বৈবাহিক সম্পর্ক। এই সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বর বধূর একান্ত নির্ভরতা, বিশ্বস্ততা ও আপনত্বের। সেই কারণে এই কবিতাতেও অন্তর্যামী বা সিন্ধূপারে কবিতার মতোই হিন্দু বিবাহের বাসর সজ্জা ও দাম্পত্য জীবনের নানা অনুষঙ্গ চিত্রকল্প রূপে দেখা যায় -

          "নতুন করিয়া লহ আরবার চিরপুরাতন মোরে।

          নতুন বিবাহে বাধিবে আমায় নব জীবন ডোরে।।"


        এখানে ভারতীয় জন্মান্তরবাদ যেন এক নতুন ব্যাখ্যা অর্জন করে। আবার কবির কল্পনায় প্রতি জন্মেই জীবন দেবতার সঙ্গে তার সম্পর্ক নতুন তাৎপর্য বহন করবে - নতুন মিলন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। এই পুরাতনের সঙ্গে নতুন মিলনের আনন্দের কথা কবি রবীন্দ্রনাথ অন্যত্র বলেছেন - 



         " ….. আমাকে নতুন রূপ নতুন প্রাণ দাও নতুন লোকের মধ্যে নিয়ে গিয়ে আমাদের অনাদি কালের চিরপুরাতন বিবাহ বন্ধন নবীকৃত করে দাও।"


        জীবনদেবতাকে কবি এখানে চিরন্তন ও শ্বাশ্বত করে তুলেছেন । কবি শেষ পর্যন্ত বুঝেছেন এই জীবনদেবতা তার কাব্য সাধনার প্রেরণা, তাকে জানতে হয় সত্যানুভবে নিজের বাইরে, নিজের গভীরে, বাউলের মতো - এই মনের মানুষ কে আমরা দেবতায় খুঁজি, কল্পনায় খুঁজি, মানুষের খুঁজি, খুঁজি হৃদয় দিয়ে কর্ম দিয়ে, এই খোঁজার শেষ নেই - 

        "তোমার খোঁজা শেষ হবেনা মোর

        যবে আমার জন্ম হবে ভোর।।"


    TAG ::  জীবনদেবতা, জীবনদেবতা কবিতা, জীবনদেবতা আবৃত্তি, জীবনদেবতা কবিতা আবৃত্তি, আবৃত্তির কবিতা জীবনদেবতা, জীবনদেবতা কি, #জীবনদেবতা#, চিত্রা জীবনদেবতা, চিত্রা কাব্যে জীবনদেবতা, জীবনদেবতা কবিতার ব্যাখ্যা, রবি ঠাকুরের কবিতা জীবনদেবতা, জীবনদেবতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনদেবতা, জীবনদেবতা কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনদেবতা কবিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা জীবনদেবতা, জীবন দেবতা, জীবন দেবতা কবিতা পাঠ, জীবন দেবতা কবিতা আবৃত্তি

    Comments

    Popular posts from this blog

    MP 2020 History MCQ suggestions, part 6th,

    সপ্ত প্রবাহের নীতি। মাধ্যমিক কমিশনের সপ্ত প্রবাহের নীতি।

    Four pillars of Education - শিক্ষার চারটি স্তম্ভ | Delors Commission 1997